নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: অবশেষে মহকুমা শাসকের হস্তক্ষেপে অচলাবস্থা কাটল পুরুলিয়া পুরসভায়। ছ’দিনের মাথায় ধর্মঘট তুলে নিলেন পুরসভার অস্থায়ী কর্মীরা। শনিবার মহকুমা শাসক উত্পল ঘোষ নিজে অস্থায়ী কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির দাবিও মেনে নিয়েছেন মহকুমা শাসক। তবে, তা যে রাতারাতি সম্ভব নয়, সেকথাও জানিয়েছেন এসডিও। এর জন্য তিনি পুরকর্মীদের থেকে দু’মাস সময় চেয়েছেন। তাতেই বরফ গলে। এরপর অস্থায়ী কর্মীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ধর্মঘট তুলে নেওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করেন।
দু’মাসের বকেয়া বেতন, পুজোর বোনাস ও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গত সোমবার থেকে ধর্মঘটে নামে পুরসভার সাফাই কর্মী সহ অন্যান্য বিভাগের অস্থায়ী কর্মীরা। ধর্মঘটের জেরে পুর পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন নাগরিকরা। এনিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল শহরবাসীর মধ্যে। দু’দিন আগেই চেয়ারম্যান নব্যেন্দু মাহালি বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। পাশাপাশি পুজোর বোনাস ১৬০০ থেকে বাড়িয়ে ১৮০০ টাকা করার কথাও ঘোষণা করেন। যদিও তাতে বরফ গলেনি। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে অনড় থাকেন অস্থায়ী পুরকর্মীরা।
শনিবার সকালে পুরসভা চত্বরে জড়ো হন অস্থায়ী কর্মীরা। বেতন বৃদ্ধি না হলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে বলে তাঁরা হুঁশিয়ারি দেন। এরপরেই এব্যাপারে এসডিওর হস্তক্ষেপের দাবি করেন চেয়ারম্যান। এদিন বিকেলে পুরপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মহকুমা শাসক। অস্থায়ী কর্মীদের একটি প্রতিনিধি দলও বৈঠকে ছিলেন। তাঁদের দাবিদাওয়ার কথা শোনেন এসডিও। জানা গিয়েছে, চেয়ারম্যান, পুরসভার কাউন্সিলার এবং অস্থায়ী কর্মীদের নিয়ে একটি কমিটি করতে নির্দেশ দিয়েছেন এসডিও। ওই কমিটিই ঠিক করবে, কাদের কাদের বেতন বৃদ্ধি হবে। দু’মাসের মধ্যেই বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন মহকুমা শাসক।
চেয়ারম্যান বলেন, কোন অস্থায়ী কর্মী কত টাকা বেতন পান, সেই তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। অনেকে আছেন যাঁরা ৩৬০০ টাকা বেতন পান। আবার অনেকে আছেন যাঁদের বেতন আট হাজার টাকা। ফলে কার বেতন বৃদ্ধির প্রয়োজন, তা কমিটিই ঠিক করবে। পুরসভার কাউন্সিলার তথা শহর তৃণমূলের সভাপতি প্রদীপ ডাগা বলেন, পুরসভায় অনেক অকাজের কর্মী আছেন। তাঁরা কাজ না করে শুধুমাত্র কাউন্সিলারদের তল্পিবাহকতা করে বেতন পান। আবার এমন কর্মীও আছেন যাঁরা নিষ্ঠার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন, অথচ ন্যায্য বেতন পাচ্ছেন না। কোন কর্মী কাজের এবং কোন কর্মী অকাজের তাও চিহ্নিত করবে ওই কমিটি। একমাত্র কাজের কর্মীদেরই বেতন বৃদ্ধি করা হবে।
সাফাই বিভাগের কর্মীদের নেতা সরোজিৎ স্যামুয়েল বলেন, পুরসভার বর্তমান বোর্ড আমাদের দু’বছর ধরে বেতন বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রক্ষা করেনি। এসডিও আমাদের থেকে দু’মাস সময় চেয়েছেন। তাঁর উপর আমাদের সম্পূর্ণ ভরসা আছে। আর এক কর্মী সুধাংশু ঘোষাল বলেন, পুজোর মুখে শহরবাসীর সমস্যার কথা আমাদের ভেবে দেখার ব্যাপারে অনুরোধ করেছিলেন এসডিও। পাশাপাশি বেতন বৃদ্ধিরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর সম্মানার্থে আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করলাম। সাফাই কর্মীদের নিয়ে বইঠক চেয়ারম্যান সহ এসডিও উৎপল ঘোষ। -নিজস্ব চিত্র