• তোলা না দেওয়ায় লরি চালকের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ, বিক্ষোভে অবরুদ্ধ আসানসোল-পুরুলিয়া রাজ্য সড়ক
    বর্তমান | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: কুলটি থানার দিশেরগড় ঘাটে তোলা না দেওয়ায় মেরে এক লরি চালকের মাথা মাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগে উত্তেজনা ছড়ায়। শনিবার ভোর ৩টে নাগাদ ওড়িশা থেকে লৌহ আকরিক নিয়ে জামুড়িয়া আসছিলেন লরিচালক শেখ রফিক। অভিযোগ, কুলটি থানার দিশেরগড়ে তাঁর গাড়ি আটকে ৩০০টাকা তোলা চাওয়া হয়। ২০০টাকা দেওয়ায় ইট দিয়ে আঘাত করে তাঁর মাথা মাটিয়ে দেওয়া হয়। এরপর অন্যান্য লরিচালকরা ভোররাতে সম্মিলিত হয়ে প্রতিবাদ করলে তোলাবাজরা ফের তাঁদের মারধর করে বলে অভিযোগ। এরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাজ্য সড়কে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিয়ে চালকরা আন্দোলন শুরু করেন। বেলা যত বেড়েছে চালকদের আন্দোলনের ঝাঁজ ততটাই বেড়েছে।

    আন্দোলনের জেরে আসানসোল-পুরুলিয়া রাজ্য সড়ক সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে যাত্রী-ভোগান্তি। পুলিস অবরোধ তুলতে গেলে চালকরা তুমুল বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, দিনের পর দিন পুলিস পোস্টের সামনে থেকেই রাতভর এই তোলাবাজি চলে। সামগ্রী সহ গাড়ি দিশেরগড় ব্রিজ পার করলেই ৩০০টাকা করে তোলা দিতে হয়। খালি গাড়ি গেলে ১০০টাকা তোলা দিতে হয়। তোলা না দিলেই তোলাবাজরা মারধর, গাড়ি আটকে রাখা সহ তুমুল অত্যাচার করে। তোলা বাবদ প্রতিদিন কয়েক লক্ষ টাকা ওঠে। সেই টাকা প্রভাবশালীরা ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ।

    এদিন স্থানীয় পুলিস ফাঁড়ির আইসি ঘটনাস্থলে পৌঁছলে, তাঁকে ঘিরেও এই গুরুতর অভিযোগগুলিকে সামনে এনে বিক্ষোভ দেখান চালকরা। তিনি এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে লরিচালকরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। আন্দোলনকারীরা এদিন প্রায় পাঁচ ঘণ্টা রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন। ভোর থেকে রাস্তা অবরোধ থাকার পর বেলা ১১টা নাগাদ ফের যানচলাচল শুরু হয়। অবরোধের জেরে দূরপাল্লার বহু সরকারি ও বেসরকারি বাস আটকে পড়ে। অনেকেই সময়মতো অফিস, স্কুল পৌঁছতে পারেননি। লরিচালকদের দীর্ঘ আন্দোলনের জেরে সাধারণ মানুষের চূড়ান্ত হয়রানি হয়। সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেও লরিচালকরা কেন থানায় লিখিত অভিযোগ করলেন না, তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।

    ক্রান্তি ড্রাইভার অ্যাসোসিয়েশনের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সাধারণ সম্পাদক শেখ মহম্মদ অঙ্কুশ বলেন, যে আমাদের চালককে মেরে মাথা ফাটিয়েছিল, পুলিস তাকে আটক করেছিল। কিন্তু, তার পরিবারের লোকজন আমাদের হাতেপায়ে ধরে। তারা জানায়, এটি একটি বড় তোলাবাজির সিন্ডিকেট। টাকা তুলে দেওয়ার জন্য তারা এক রাতে ৫০০টাকা করে মজুরি পায়। ছেলেটিও আমাদের মতো দিনমজুর। আমরা তার হাজতবাস চাই না। আমরা চাই সিন্ডিকেট বন্ধ হোক। তাই অভিযোগ করিনি।

    ডিসি সন্দীপ কাররা বলেন, আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

    আসানসোল-পুরুলিয়া রাজ্য সড়ককে ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডোর বললে ভুল হয় না। ওড়িশার বিভিন্ন খনি থেকে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এই সড়ক পথ ধরেই আসানসোল, সালানপুর, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জের বিভিন্ন কারখানায় যায়। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন গড়ে হাজারের বেশি লরি চলাচল করে। এই রাস্তাতেই গাড়ি পিছু টাকা তোলার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দামোদর নদীর একপাশে কুলটির দিশেরগড়, অন্যপাশে পুরুলিয়া জেলার নিতুড়িয়া থানা। এই এলাকাতেই তোলাবাজদের দৌরাত্ম্য সবচেয়ে বেশি। অভিযোগ, একটা সময়ে পুলিসও সরাসরি তোলা আদায় করত। এই অভিযোগে নিতুড়িয়া থানার পুলিসকর্মীরা শাস্তির মুখেও পড়েছিল। তারপরই থেকেই দুষ্কৃতীদের মাধ্যমে তোলা আদায় হচ্ছিল বলে অভিযোগ।
  • Link to this news (বর্তমান)