• ‘সারা বছর অনলাইনের কেনাকাটা থাকুক, পুজোর বাজারে না এলে মন আনচান করে’
    বর্তমান | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এত্তো ভিড়.. এভাবে মানুষের জঙ্গলে ভেসে গিয়ে জামাকাপড় কেনার কোনও মানে হয়? হ্যাঁ, হয় বইকি! দমদমের সুলেখা মিত্রের ঘামে ভেজা মুখে সেকথা স্পষ্টও। একগাল হেসে বললেন, ‘সারা বছর টুকটাক অনলাইনেই কেনাকাটি করি। কিন্তু পুজোর সময় বাজারে না এলে মন কেমন যেন আনচান করে!’ কেন? ‘এই যে এত ভিড়। একটু ঘোরা হয়। একটু খাওয়া-দাওয়া হয়। তবেই তো মনে হয় পুজো আসছে।’ পাশ থেকে একজন ভাসিয়ে দিয়ে গেলেন, ‘পুজো আসছে, পুজো আসছে এই ব্যাপারটাই ভালো। এসে গেলে তো হয়েই গেল।’ শনিবার বিকেলে প্রখর রোদে উপচে পড়া নিউ মার্কেটে এই ছিল বহু ক্রেতার চর্চার বিষয়বস্তু। 

    বাঙালির সবথেকে বড় উৎসব দুর্গাপুজো মানে এখন আর ষষ্ঠীর অপেক্ষা নয়! ঠাকুর দেখা শুরু হয়ে যায় প্রায় মহালয়া থেকেই। তাই বাজার করার জন্য হাতে সময়ও বড় কম। অনেকে প্রশ্ন করেন, এখন তো সব কিছু অনলাইনেই হয়ে যায়। তার উপর গালভরা নামের গাদাগুচ্ছের ডিসকাউন্টের ‘সেল’! এসবের পরও পুজোর জামা কিনতে হাতিবাগান-গড়িয়াহাট কিংবা ধর্মতলার রাস্তায় এত ভিড় কেন? হাতিবাগানের এক বিক্রেতা বলছিলেন, ‘আমাদের এখানে যা যা ডিজাইন আছে, অনলাইনে হাজার খুঁজেও পাবেন না।’ আর ক্রেতারা? তাদের সাফ বক্তব্য, ‘ভিড় যতই থাকুক, চোখের সামনে হাতে নিয়ে জামাকাপড় দেখে নেওয়াই ভালো। তাছাড়া সাইজের সমস্যা হলে আবার এসে পাল্টে নেওয়া যায়। কিন্তু অনলাইন হলে রিটার্ন-রিফান্ড হাজারো ঝক্কি!’ কিন্তু কলকাতার উত্তর হোক বা দক্ষিণ, পুজোর বাজারে সেই ঝক্কির সহজ সমাধান আছে।

    শনিবার মানেই সপ্তাহশেষের ছুটির আমেজ শুরু হয়ে গিয়েছে। তার উপর আকাশও পরিষ্কার। তাই এমন দিনে রোদ কমতেই বাঙালি বেরিয়ে পড়েছে বাজারে। গড়িয়াহাট কিংবা হাতিবাগানের ফুটপাত এমনই এক জায়গা, যেখানে বয়স আর চেহারা বলে দিলেই উপযুক্ত মাপের জামা দিয়ে দেন দোকানিরা। গড়িয়াহাটে এই মাপ নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করায় এক দোকানি রেগেই গেলেন। ক্রেতা বলছেন, ৪৪ সাইজের জামা চাই। নাছোড় দোকানির এক রা, ‘জামা কার জন্য, সেটা বলুন!’ অনেক কথাবার্তার পর ক্রেতা বললেন, ‘আমার সাইজের।’ দোকানি নির্দ্বিধায় বলে দিলেন, ‘৪৬ আর ৪৪ দুটোই নিয়ে যান। তারপর বলবেন।’ সঙ্গে ঝাঁঝালো স্বগতোক্তি, ‘ওসব অনলাইনের ভূত চাপিয়ে এখানে আসবেন না!’

    শহরের রাস্তাজুড়ে বাঁশের কাঠামো বসে গিয়েছে। কোথাও কোথাও দৈত্যাকার বিজ্ঞাপনও উঁকি দিচ্ছে। আর জামাকাপড়ের বড় বড় ব্যাগ হাতে রাস্তা পার, ফুটপাত বদল করছেন অগুনতি মানুষ। দিনভর এ দোকান ও দোকান দৌড়ে ক্লান্ত শিশু ঘুমিয়ে পড়েছে বাবার কোলেই। গড়িয়াহাটে এখন সিগন্যাল লাল হলে মোটামুটি মিনিট তিনেক দাঁড়াতে হচ্ছে। জানান দিচ্ছে, উত্সবের আমেজে প্রবেশ করেছে বাঙালি।
  • Link to this news (বর্তমান)