সংবাদদাতা, তেহট্ট: স্বর্ণাভ বিশ্বাস (৮) নামে এক বালকের প্লাস্টিকে মোড়া দেহ উদ্ধার ঘিরে শনিবার উত্তাল হল তেহট্ট থানার নিশ্চিন্তপুর। বালককে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সন্দেহে ক্ষিপ্ত জনতার গণপিটুনিতে প্রতিবেশী দম্পতি উৎপল মণ্ডল (৪২) ও তাঁর স্ত্রী সোমা মণ্ডলের (৩৮) মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের বউমা জখম অবস্থায় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি দুই আত্মীয়ের সারের দোকান ও পাটের গোডাউনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অতিরিক্ত পুলিস সুপার(গ্রামীণ) উত্তম ঘোষ, মহকুমা পুলিস আধিকারিক শুভতোষ সরকার, তেহট্ট থানার আইসি সহ বিশাল পুলিস বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। উত্তেজনা থাকায় গ্রামে পুলিস মোতায়েন করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে বাড়ি থেকে খেলতে বেরিয়েছিল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র স্বর্ণাভ। দীর্ঘক্ষণ বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ছবি দিয়ে খোঁজ শুরু হয়। রাত পর্যন্ত সন্ধান না পেয়ে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। এদিন সকালে খোঁজ চালানোর সময় বালকের বাড়ির পিছনে বাঁশবাগানের ভিতর ডোবা থেকে প্লাস্টিকে মোড়া দেহটি উদ্ধার হয়। দেহ বাড়িতে আনতেই ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন এলাকার বাসিন্দারা। টোটোচালক প্রতিবেশী উৎপলের পরিবারের বিরুদ্ধে খুনের সন্দেহ দানা বাঁধে। তারপরই ওই দম্পতি ও তাঁদের বড় বউমাকে বাড়ি থেকে বের করে একটি মণ্ডপের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। শুরু হয় গণপিটুনি। উৎপলের দুই ছেলে ও ছোট বউমা পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন। উত্তেজিত জনতা উৎপলের এক আত্মীয়ের সারের দোকান ও পাটের গোডাউনেও আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিসকে পর্যন্ত গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বাধা পায় দমকলও। পরে বিশাল বাহিনী নিয়ে ঢোকেন পুলিস আধিকারিকরা। পুলিসের সহযোগিতায় দমকল শেষে আগুন নেভায়। মারাত্মক জখম অবস্থায় তিনজনকে তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক দু’জনকে মৃত ঘোষণা করেন।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কয়েক মাস আগে উৎপল পাশের গ্রামের দুই শিশুকে অপহরণ করতে গিয়ে ধরা পড়ে গিয়েছিল। তখন তাকে মারধর করে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিসে অভিযোগ হয়নি। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পাচারের উদ্দেশ্যেই উৎপল অপহরণ করেছিল স্বর্ণাভকে। খোঁজাখুঁজি শুরু হওয়ায় তাকে বের করতে সাহস পায়নি। ভোরের দিকে এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। সেই সুযোগে তাকে খুন করে প্লাস্টিকে মুড়ে দেহ ডোবায় ফেলা দেওয়া হয়েছে।
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা পিঙ্কি বিশ্বাস শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন। স্বর্ণাভর বাবা সত্যেনবাবু বলেন, ‘পরিকল্পনা করেই ছেলেকে খুন করা হয়েছে।’ অতিরিক্ত পুলিস সুপার উত্তম ঘোষ জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে।