নিজস্ব প্রতিনিধি – আজ, রবিবার নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা। ২০১৬ সালের পরে দীর্ঘ ৯ বছর পরে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে। পরীক্ষা দিতে চলেছে অন্তত ৩ লক্ষ ১৫ হাজার প্রার্থী। যোগ্য চাকরিহারাদের সঙ্গে থাকবে নতুন প্রার্থীরাও। সুষ্ঠভাবে ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা সম্পন্ন করতে নেওয়া হয়েছে কড়া ব্যবস্থা। সতর্ক রয়েছে কমিশন। প্রশ্নফাঁস হওয়া আটকানো থেকে শুরু করে দাগি চাকরিহারাদের পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার জন্য নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ। শনিবার এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার এক সাংবাদিক বৈঠকে এই পদক্ষেপগুলির সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।
প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া রুখতে সিদ্ধার্থ জানিয়েছেন, প্রশ্নপত্র যাতে ফাঁস না হয় সেক্ষত্রেও এসএসসি কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রতিটি প্রশ্নপত্রে এমন ব্যবস্থা থাকছে যেখানে কেউ যদি প্রশ্নপত্রের ছবি তোলে সেক্ষেত্রে কার ফোন থেকে ছবি তোলা হচ্ছে তা জেনে যাবে কমিশন। প্রতিটি প্রশ্নপত্রে থাকবে আলাদা আলাদা সিকিউরিটি ফিচার। তখনই সেই পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে পরীক্ষায় কোনও দাগি চাকরিহারা প্রার্থী বসছে কিনা। সেই প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, প্রতিটি অ্যাডমিট কার্ডে এবার বারকোড থাকবে। সেই বারকোড স্ক্যান করলেই জানা যাবে সেটি আসল কিনা। কারণ এসএসসি কয়েকদিন আগেই নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদন করা অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ তালিকা থেকে বাতিল করে দিয়েছে। এমনকি তাঁদের অ্যাডমিট কার্ডও বাতিল করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে যদি কোনও দাগি অযোগ্য প্রার্থীরা ভুয়ো অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে পরীক্ষা দিতে আসেন সেক্ষত্রে স্ক্যান করে খুব সহজেই তা বোঝা যাবে। পরীক্ষা কক্ষে পেন থেকে শুরু করে জলের বোতলের উপরেও সতর্কতা অবলম্বন করছে কমিশন। পেন ও জলের বোতল হতে হবে স্বচ্ছ। অ্যাডমিট কার্ড ও অন্যান্য নথি কোনও ফাইল বা ফোল্ডারে নিয়ে গেলে তাও স্বচ্ছ হতে হবে বলে জানানো হয়েছে। পরীক্ষা কক্ষে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কমিশনের তরফে। যদি কোনও পরীক্ষার্থী মোবাইল ফোন, ডিজিট্যাল ওয়াচ, ক্যালকুলেটর নিয়ে যায় তাঁর পরীক্ষা বাতিল হবে বলে জানানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগের গোটা প্যানেলটি বাতিল করে দেওয়া হয়। অভিযোগ ছিল নিয়োগের প্যানেল ছিল দুর্নীতিযুক্ত। সেই কারণে গোটা প্যানেলটি বাতিল করেছে শীর্ষ আদালত। চাকরিহারা হতে হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল চাকরিহারাদের মধ্যে থেকে যোগ্যদের বেছে নতুন পরীক্ষার আয়োজন করতে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষার ফল প্রকাশের জন্য নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সেই নির্দেশমতোই স্কুল সার্ভিস কমিশন পরীক্ষার আয়োজন করেছে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে মোট ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার পরীক্ষার্থী। আজ নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হবে। যেখানে অংশ নেবে প্রায় ৩ লক্ষ ১৫ হাজার প্রার্থী। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর হতে চলেছে একাদশ-দাদ্বশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা। সেখানে অংশ নিতে চলেছেন প্রায় ২ লক্ষ ৪৬ হাজার প্রার্থী। এই পরীক্ষার জন্য নানাদিক থেকে সতর্কতা অবলম্বন করেছে কমিশন। শনিবার কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার জানান, পরীক্ষা যাতে স্বচ্ছভাবে হয় সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, ৬৩৫ টি কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষা শুরু হবে দুপুর ১২ টা নাগাদ। শেষ হবে দুপুর ১টা বেজে ৩০ মিনিটে। শুধুমাত্র বিশেষভাবে সক্ষম পরীক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা শেষ হবে দুপুর ২ টো নাগাদ। এসএসসির নির্দেশ অনুযায়ী পরীক্ষা শুরু হওয়ার দুই ঘন্টা আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে প্রশ্নপত্র। ১১ টা ৪৫ মিনিটের সময় পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র তাঁদের হাতে পেয়ে যাবেন। একটি মুখবন্ধ খামে প্রশ্নপত্র ও ওএমআর শিট দুটোই থাকবে। কিন্তু তখন শুধুমাত্র সেখানে নাম, রোল নম্বর লেখা যাবে। ১২ টার সময় একেবারে প্রশ্নপত্র খুলতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে শুরু করে প্রতীক্ষা শেষ না হলে কাউকে পরীক্ষা কক্ষের বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। তিনি আরও জানিয়েছেন, সকল পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করানোর আগে ভালো করে চেক করা হবে। মহিলা পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি এনক্লোজারের ব্যবস্থা থাকবে সকল পরীক্ষা কেন্দ্রে। পরীক্ষার্থীরা শুধুমাত্র অ্যাডমিট কার্ড ও স্বচ্ছ পেন নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। রাখা হবে মেটাল ডিটেক্টরও। পরীক্ষাকেন্দ্রে ২৫ জন পরীক্ষার্থীর জন্য গড়ে ১ জন করে অবজার্ভার রাখা হয়েছে। অবজার্ভারদের কারও কাছে কোনও মোবাইল ফোন রাখা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
উল্লেখ্য, গত ৩০ আগস্ট শীর্ষ আদালতের নির্দেশে অযোগ্য বা দাগি চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছিল কমিশন। ১৮০৬ জন দাগি চাকরিহারার নামও প্রকাশ করে কমিশন। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ ছিল কোনও দাগি অযোগ্য চাকরিহারা প্রার্থী যাতে পরীক্ষায় বসতে না পারে। এরপরেই এসএসসি দাগি চাকরিহারাদের নাম প্রকাশ করে। ২০ হাজার আবেদনকারীর আবেদন বাতিল করে দেয় কমিশন। যার মধ্যে দাগি চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে অনেকেরই আবেদনপত্র বাতিল হয়ে যায়। এরপরে আজ শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রথম দিন। যেখানে গত বারের পরীক্ষার চেয়ে বেশি সংখ্যক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে চলেছেন বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার।