মতুয়াভূমে রাহুল গান্ধীর আকস্মিক হানা, অধীরের হাত ধরে কংগ্রেসে ঝোঁক একাংশের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাজনৈতিক মহলে নতুন চমক! বনগাঁর মতুয়া সমাজের কিছু সাধারণ বিজেপি কর্মী আচমকা বিহারে গিয়ে সরাসরি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করলেন। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা মতুয়া দুর্গে এ ঘটনা অস্বাভাবিক বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে বিজেপি বা তৃণমূল— দুই পক্ষই আপাতত প্রকাশ্যে বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব দিতে নারাজ।
সূত্রের খবর, বনগাঁ-রানাঘাট অঞ্চলের অন্তত ২৫ জন মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি গত ২৯ আগস্ট বিহারে গিয়ে রাহুল গান্ধীর ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’র শিবিরে দেখা করেন। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের সেতুবন্ধন ছিলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। এই প্রতিনিধিদল সরাসরি কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে বলেও খবর।
অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন, স্থানীয় স্তরে প্রথমে কয়েকজন বিজেপি কর্মী কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র কেতন জয়সওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তাঁরা অধীরের দ্বারস্থ হন। বিজেপি বা তৃণমূলের প্রতি অনাস্থা, বিশেষ করে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ নিয়ে আশঙ্কাই তাঁদের কংগ্রেসমুখী করেছে। অধীরের কথায়, ‘ওঁরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এসেছিলেন। তাঁদের উৎসাহ দেখে আমি সরাসরি রাহুলজির সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করি।’
২৯ আগস্ট রাতে বিহারের সারণ জেলার একমা গ্রামে রাহুল গান্ধীর ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ শেষ হয়। পরের দিন সকালে যাত্রা শুরুর আগে মতুয়া প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে প্রায় ২০ মিনিট বৈঠক করেন রাহুল। জানা গিয়েছে, রাহুল তাঁদের সমস্যার কথা শোনেন এবং দিল্লিতে আবার বিস্তারিত আলোচনার আশ্বাস দেন। কংগ্রেসের মুখপাত্র কেতন সেই বৈঠকের একটি ছবি প্রকাশ করেছেন, যেখানে মতুয়া প্রতিনিধিদলকে হাতে ব্যানার নিয়ে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। ব্যানারে লেখা— ‘এসআইআর-এ বিপদ / কংগ্রেসে নিরাপদ’।
ঘটনাটি নিয়ে বিজেপি শিবিরে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিকাশ ঘোষ জানিয়েছেন, ‘তপন হালদারকে শোকজ করা হবে। বিজেপি কর্মী হয়ে তিনি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন কেন, জানতে চাইব।’ যদিও তপন দলের কোনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নেই বলে বিজেপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে।
ঠাকুরবাড়িও বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারেনি। তাঁদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ‘মতুয়া মেলায় নিয়ে যাওয়ার নাম করে ওই প্রতিনিধিদের রাহুল গান্ধীর কাছে পাঠানো হয়েছিল।’
তৃণমূল অবশ্য ঘটনাটিকে ঠাকুরবাড়ির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের প্রতিফলন বলেই দাবি করছে। স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশের মতে, মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক বলে আলাদা কিছু নেই। তাঁদের বক্তব্য, ‘মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাজের জন্য ভোট দেন। বিজেপি ভোট পায় উদ্বাস্তু সমাজের একাংশের সমর্থন থেকে। কংগ্রেস এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।’
তবে মতুয়া ও উদ্বাস্তু আন্দোলন নিয়ে গবেষণা করা এক বিশেষজ্ঞের মতে, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাঁর বক্তব্য, ‘বিজেপি ও তৃণমূলের প্রতি অনাস্থা তৈরি হলে এলাকার প্রবীণ মানুষরা স্বাভাবিকভাবেই কংগ্রেসের কথা ভাববেন। কারণ, প্রমথরঞ্জন ঠাকুর কংগ্রেস করতেন। তিনি বিধান রায়ের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীও ছিলেন। সেই পুরনো আবেগ এখনও একাংশের মধ্যে রয়েছে।’
অর্থাৎ, বিজেপি-তৃণমূল বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে না চাইলেও, কংগ্রেস যে মতুয়াভূমে অন্তত প্রতীকীভাবে জায়গা করে নিতে চাইছে, তা নিয়ে কারও কোনো সংশয় নেই।