আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিপ্লবী শহিদ কানাইলাল দত্ত, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে যাঁর অবদান অনস্বীকার্য। সেই বিপ্লবীর স্মৃতি বিজড়িত মাতুলালয় ভাঙার নির্দেশ দিয়েছে পুরনিগম। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন জল্পনা। তবে কি রাসবিহারী বসুর মতো এবার ভাঙা পড়বে কানাইলাল দত্তের বাড়িও! কানাইলাল দত্তের বাড়িতে পুরোনিগমের পোস্টার ঘিরে শুরু হয়েছে শহর জুড়ে বিতর্ক।
চন্দননগর সর্ষেপাড়া এলাকায় রয়েছে বিপ্লবী কানাইলাল দত্তের মামার বাড়ি। সেই মামার বাড়িতেই ছোট থেকে বড় হয়েছেন কানাইলাল দত্ত। দীর্ঘকাল যাবত বাড়িটি পরিত্যক্ত থাকায় বাড়ির দেওয়াল কিছুটা হেলে গিয়েছে। বাড়িটি যে বিপজ্জনক অবস্থায় তার বোর্ড পুরোনিগম থেকে লাগিয়ে দিয়ে যাওয়া হয়েছিল বাড়ির দেওয়ালে। এবার সেখানে দেওয়া হয়েছে এক নতুন সরকারি নির্দেশিকা পোস্টার। যে পোস্টারে লেখা রয়েছে বাড়িটি বিপজ্জনক অবস্থায় থাকার জন্য আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাড়িটি ভেঙে ফেলা হবে।
রাসবিহারী বোস ইনস্টিটিউট-এর ডিরেক্টর কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, 'কানাইলালের মামার বাড়ির সামনে চন্দননগর পুরনিগমের দুটো নোটিশ দেখা গেল। একটা চার তারিখে লেখা, একটা বাইশ তারিখে লেখা। বাড়ির মালিক যদি দ্রুত ভেঙে না দেন, তাহলে কর্পোরেশনের তরফে বাড়িতে ভেঙে দেওয়া হবে। আমাদের কাছে প্রশ্ন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা জন্য কানাইলাল দিকদর্শক হিসেবে ছিল। সেই সময় একমাত্র বিএ পাস করা এক যুবক ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়েছিলেন। এটা চন্দননগর বাসির আবেগ। সেই সেন্টিমেন্ট তাঁকে নিয়ে এরা ছেলে খেলা শুরু করেছে। চন্দননগরের কানাইলালকে নিয়ে তারা এমন কোন কিছু করেননি। কোনও স্মারক তাঁরা তৈরি করেননি। সামনের যে বাড়িতে কানাইলালের আবক্ষ মূর্তি রাখা রয়েছে, সেখানে বছরে একবার ঘটা করে মালা দেওয়া ছাড়া কিছুই হয় না। চন্দননগরে কোনও স্মৃতি নেই কানাইলালের। শহরের অন্যান্য অনেক ভগ্নপ্রায় বাড়িগুলির কোনও ব্যবস্থা না করে, কানাইলালের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ির দিকে নিয়ে এত ব্যস্ততা কিসের। চন্দননগরবাসীর কাছে কানাইলালের যে স্মৃতি, তাকে ধূলিসাৎ করার চেষ্টা চলছে। চন্দননগর পুরনিগামের যদি কোনও সদ উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে কানাইলালের জন্য আগে কিছু করুন। যে ঘরটিতে কানাইলালের মূর্তি রয়েছে, সেই ঘরটিকে সংস্কার ব্যবস্থা করুন। তারপর চন্দননগরবাসীর কাছে ভাবনা রাখবেন। ১৫ দিনের মধ্যে ভেঙে দেব, এই চিন্তা ভাবনা চন্দননগরবাসীরা মেনে নেবেন না। চন্দননগর কর্পোরেশন আইন মোতাবেক বিপজ্জনক বাড়ির ব্যবস্থা নেবে এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাতে কারও আপত্তি নেই। কিন্তু অন্যান্য বাড়িগুলির ব্যবস্থা না নিয়ে কানাইলালের মামার বাড়িকে নিয়ে তারা পড়ল কেন। এতে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।'
কানাইলালের মামার বাড়ির পাশেই এক প্রতিবেশী অসিত বরণ সুরুল বলেন, 'এটা কানাইলালের মামার বাড়ি। এখানেই থাকতেন কানাইলাল। পুরনিগম বুঝেছে তাই নোটিশ দিয়েছে। যাতায়াত করতে আমাদের ভয় হয় না।ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি বুঝতে পারছি না। কেন ভেঙে ফেলার চিন্তাভাবনা করছে বলতে পারব না। বহু কাল ধরে কানাইলালের যে স্মৃতি আছে তা থাকা উচিত।'
মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, 'এটা অপপ্রচার। ২০১০ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর রাসবিহারীর বসুর জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছিল, সেটা আমরা রক্ষা করেছি। কানাইলাল দত্তের মামার বাড়ি যে জায়গাটা অনেকটা বড়। তিনি যেখানে বসবাস করতেন তারপরে একটি বসতবাড়ি ছিল। সেই বাড়িটি বিপজ্জনক হয়ে আছে। তার পাশের রাস্তা দিয়ে পথচারীরা আশঙ্কা করছেন যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে। তার পাশে একটি শিশুদের স্কুল চলে, তাদের পক্ষ থেকেও আমাদেরকে জানানো হয়েছে। এই বাড়িটি কার জায়গা, কার মালিকানা দিন সেটা জানার জন্যই চন্দননগর কমিশনারের তরফে নোটিশ করা হয়েছে আইন মেনেই। প্রথম নোটিফিকেশনে একজন শরিকের হদিশ পাওয়া গেছে। আর একজনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁদেরকে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে যাতে ভগ্নপ্রায় অংশ ভেঙে দেয়। না হলে আমরাই ভেঙে দেব। আর যাঁরা বলছেন কানাইলালের বিল্ডিংয়ের সংস্কার হয়নি, সেটাও আগামী দিনে সংস্কার করা হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে এইরকম কথাবার্তা বলছে।যে অংশটা ভগ্নপ্রায় সেটার জন্য বলা হয়েছে। কানাইলাল দত্ত যেখানে বসবাস করতেন, সেই অংশের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। চন্দননগরের ভগ্নপ্রায় বাড়ি ভেঙেছি এরকম অনেক নজির আছে। কানাইলাল দত্তের মামার বাড়ির যে অংশে থাকতেন, সেখানে আঘাত হানার উদ্দেশ্য নেই পুরনিগমের।'