• বিহারের ধাঁচে এসআইআর-এর আগে ‘মিনি এসআইআর’ বঙ্গে
    আনন্দবাজার | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • এ রাজ্যে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজ শুরুর দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে তার আগেই গত এসআইআর-এর তালিকার সঙ্গে সর্বশেষ ভোটার তালিকা মিলিয়ে দেখার কাজ শুরুর নির্দেশ দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। বিশ্লেষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, এ কার্যত মূল এসআইআর-এর আগে ‘মিনি-এসআইআর’-এর মতোই। কারণ, এতে খড়ের গাদা থেকে সুচ খোঁজার মতো কোটি কোটি ভোটারের মধ্যে থেকে মৃত, অযোগ্য এবং ভুয়ো ভোটার সহজে চিহ্নিত করতে বেশি সময় পাওয়া যাবে।

    আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের সব মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের (সিইও) বৈঠকে ডেকেছেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। তাঁর সঙ্গে অপর দুই নির্বাচন কমিশনার-সহ কমিশনের বাকি আধিকারিকেরাও থাকবেন। মনে করা হচ্ছে, এ রাজ্য তথা গোটা দেশে এসআইআর শুরুর আগে সম্ভবত সেটাই মুখোমুখি শেষ প্রস্তুতি বৈঠক। সেখানে এ রাজ্যের সিইও-কে গত এসআইআরের সঙ্গে এখনকার ভোটার তালিকার ‘ম্যাপিং’ তথ্য তুলে ধরতে হবে। কিন্তু কী এই ম্যাপিং?

    কমিশন-কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এ রাজ্যে শেষবার এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে। দীর্ঘ ২৩ বছর পরে আবার তা শুরু হওয়ার মুখে। এই ২৩ বছরে অনেক ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। আবার বাদও গিয়েছেন। চলতি বছর সর্বশেষ যে সংশোধিত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল, তার সঙ্গেই মিলিয়ে দেখা হবে ২০০২ সালে এসআইআর-এ প্রকাশিত ভোটার তালিকা। বিহার এসআইআর-এর আগেও একই কাজ হয়েছিল। তাতে অন্তত ৭০% ভোটারের ম্যাপিং ইতিবাচক ছিল। ফলে এসআইআর চালুর সময়ে চিহ্নিত ওই ৭০% মানুষ কমিশনের যে আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন, তা নিয়ে আলাদা যাচাই বা প্রমাণ চাইতে হয়নি। সেই ভোটারদের নাম দ্রুত এসআইআর-এর মূল তালিকাভুক্ত হয়ে গিয়েছিল এমনিতেই। বাকি ৩০% ভোটারের আবেদনপত্র যাচাই হয়। দাখিল করতে হয় উপযুক্ত নথিও। সময় নিয়ে সেই সংখ্যক ভোটারের আবেদন খতিয়ে দেখে খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়। একই পদ্ধতি হবে এ রাজ্য-সহগোটা দেশেই।

    তথ্য বলছে, এ রাজ্যে ২০০১ সালের জানুয়ারিতে সাধারণ যাচাইয়ের পরে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় নাম ছিল প্রায় ৪.৮২ কোটি মানুষের। তার পরেই হওয়া এসআইআর-এর তালিকা প্রকাশ পায় ২০০২ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে। আগের তালিকা থেকে প্রায় ২৪ লক্ষ নাম বাদ গিয়ে এসআইআর-এর তালিকায় ভোটার সংখ্যা হয় প্রায় ৪.৫৮ কোটি। চলতি বছর সাধারণ যাচাইয়ের পরে গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত কমিশনের তালিকায় এ রাজ্যের ভোটার সংখ্যা প্রায় ৭.৬৪ কোটি। অর্থাৎ, শেষ এসআইআর-এর পরে গত ২৩ বছরে প্রায় তিন কোটি ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সূত্রে কমবেশি ৬০% ভোটারই কমিশন প্রস্তাবিত দুই তালিকার ‘ম্যাপিং’-এ চিহ্নিত হয়েই যাবেন। ফলে তাঁদের নতুন তালিকাভুক্ত করতে বেশি সময় খরচ হবে না কমিশনের। যাচাই হবে বাকি সংখ্যক ভোটারের। এক কর্তার কথায়, “২০০২ সালেরএসআইআর-তালিকায় কোনও ভোটারের যে ঠিকানা ছিল, পরে তা বদল হলেও সমস্যা নেই। কারণ, নামটা অভিন্ন। তাতে পুরনো ঠিকানার প্রমাণ জোগাড়ে ব্যস্ত হতে হবে না সংশ্লিষ্টকে। আবার ২০০২ সালের তালিকায় নাম থাকা যে ভোটারদের পরে মৃত্যু হয়েছে, অথচ এখনও নাম থেকে গিয়েছে এখনকার ভোটার তালিকায়, তাঁদেরও চিহ্নিত করা যাবে সহজে। কারণ, এসআইআর-এ দেওয়া আবেদনপত্র ভোটারকেই ভর্তি করতে হবে। মৃত ভোটারের পক্ষে তা করা সম্ভব নয়।”

    এখন সারা বছর ভোটার তালিকায় নাম তোলা বা সংশোধন সম্ভব। ঘটনাচক্রে, গত ১ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত যে সংখ্যায় রাজ্যে ভোটার আবেদন ছিল, ১ জুন থেকে ৭ অগস্ট পর্যন্ত তা-ই বেড়েছে বিপুল হারে। তীব্র বৃদ্ধি হয়েছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতেও। আবার জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে ভোটার বৃদ্ধির হার তুলনা (ইলেক্টর পপুলেশন রেশিয়ো) সংক্রান্ত কমিশনের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিরিখে গত ১৩ বছরে ভোটার বৃদ্ধির হার পৌঁছেছে প্রায় ১৬৪ শতাংশে। এ সবের পুরোটাই অসাধু বলে ধরে নেওয়া ঠিক না হলেও, উভয় বৃদ্ধির হারকে স্বাভাবিক বলেও মনে করছেন না বিশ্লেষকদের অনেকেই। তাই ম্যাপিং-এ মিল থাকা চিহ্নিতদের বাদ দিয়ে বাকিদের ক্ষেত্রে যাচাইয়ে যথেষ্ট সময় নিয়ে নজরদারি চালানো সম্ভব বলেই মনে করছেন তাঁরা।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)