পুজোর মরসুমের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়ে গেল পিতৃপক্ষের হাত ধরে। মহালয়ার সময় থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কার্যত ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাবে। তার আগে আগামী বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতির দিকে নজর রেখে দলের নবগঠিত কমিটিগুলির বৈঠক সেরে নিতে চলেছে কংগ্রেস। আগামী ৭ দিনে শহরে আসতে চলেছে এআইসিসি-র একাধিক নেতা।
গত মাসেই তৈরি হয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন কার্যনিবাহী কমিটি, রাজনীতি বিষয়ক কমিটি এবং নির্বাচন কমিটি। সূত্রের খবর, এই তিন কমিটি-সহ প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্যদের নিয়ে সভা করার জন্য শহরে প্রেক্ষাগৃহ ঠিক করার তোড়জোড় হয়েছিল। কিন্তু এআইসিসি-র কমিটিতেও আছে, এমন দু-এক জন নেতা থাকতে পারবেন না বলে জানানোয় পরে ঠিক হয়েছে, দলের সদর দফতর বিধান ভবনেই প্রদেশ কংগ্রেসের পদাধিকারীদের নিয়ে বৈঠক হবে। প্রদেশ কংগ্রেসের তিন কমিটি, শাখা সংগঠনগুলির প্রধানদের পাশাপাশি ৩৩টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতিদেরও বৈঠকে ডাকা হচ্ছে। এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলার পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মীর উপস্থিত থাকবেন মোট ২৩২ জনকে নিয়ে দলের ওই বৈঠকে। তার দু’দিন আগে শহরে এসে প্রদেশ কংগ্রেসের রাজনীতি বিষয়ক কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ঘরোয়া আলাপচারিতায় বসতে পারেন এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপাল।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে শহরে আসার কথা কংগ্রেস সাংসদ এবং এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক বেণুগোপালের। সেই অবসরেই হোটেলে রাজনীতি বিষয়ক কমিটির (তিন কমিটির মধ্যে যার কলেবর সব চেয়ে ছোট) সদস্যদের তাঁর মুখোমুখি বসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে। দুই বৈঠকের এই পর্ব মিটে গেলে সব ঠিক থাকলে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর কলকাতায় আসতে পারেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় যুব নেতা কানহাইয়া কুমার। উত্তর কলকাতার রামমোহন হলে কানহাইয়ার উপস্থিতিতে সভা হওয়ার কথা। একটি সূত্রের ইঙ্গিত, কানহাইয়ার ওই মঞ্চে ‘চমক’ও থাকতে পারে। ওই সময়ে শহরে মহাজাতি সদনের মতো প্রেক্ষাগৃহ পাওয়া যাচ্ছে না বলেই রামমোহন হলে কানহাইয়ার সভা আয়োজন করা হচ্ছে।
রাজ্যে বিধানসভা ভোটে সব আসনে লড়ার ঘোষণা করে প্রস্তুতি নিতে চাইছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেসের পরিটিত নেতাদের মধ্যে কারা বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক, সেই মনোভাব বুঝে নেওয়ার চেষ্টাও হচ্ছে দলীয় স্তরে। এআইসিসি পর্যবেক্ষকের উপস্থিতিতে পদাধিকারীদের নিয়ে বৈঠকে এই সব বিষয়েই আলোচনা হওয়ার কথা। পাশাপাশি, রাজ্যের তফসিলি জাতি ও জনজাতির জন্য সংরক্ষিত আসনগুলির জন্য দু-তিন জন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঠিক করতে সংশ্লিষ্ট শাখার নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। এখনকার মতো পদাধিকারী বৈঠক সেরে রেখে পরে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির (পিসিসি) সব সদস্যকে নিয়ে পুরোদস্তুর সভাও হবে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্করের বক্তব্য, ‘‘গত বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে আমাদের জোট ছিল। এ বার কী হবে, পরের কথা। তার আগে সংরক্ষিত আসন-সহ সব কেন্দ্রের জন্যই আমাদের সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। রাজনৈতিক অভিমুখও ঠিক রাখতে হবে। আমরা সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছি।’’
শিলিগুড়িতে শনিবারই প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্করের নেতৃত্বে এবং এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক মীর, সহ-পর্যবেক্ষক অম্বা প্রসাদের উপস্থিতিতে উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন, তিস্তার ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থার দাবিতে এবং ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ভাবে ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধনের (এসআইআর) প্রতিবাদে দলের মিছিলে ভিড় কংগ্রেস নেতৃত্বের উৎসাহ বাড়িয়েছে। মিছিল থেকে এর পরে ‘উত্তরকন্যা অভিযানে’র ডাকও দিয়েছেন তাঁরা।