প্রশাসনের পাশাপাশি ‘শিরদাঁড়া টান’ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসেরও। আজ রবিবার ৩৫ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগের প্রথম দফার পরীক্ষা, আসলে বিধানসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদেরও। তার মধ্যেই এই পরীক্ষা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করে ‘দাগি’ চাকরিপ্রার্থীদেরও এ বারের পরীক্ষার বসানো হচ্ছে। সেই তালিকায় মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয়া আছেন বলেও দাবি করেছেন তিনি।
গত তিন- চার বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে নাজেহাল রাজ্য সরকার ও শাসকদল। যে ভাবে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে সরকারকে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে তাতে শাসক হিসেবে চরম চাপে পড়েছে দলও। এই অবস্থায় এই সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন ভাবে এই ‘সুযোগ’ কাজে লাগাতে চাইছেন শাসক শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে খবর, গত কয়েকদিন ধরেই গোটা প্রক্রিয়ায় নজর রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সহ গোটা প্রশাসন। একই সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে প্রয়োজনীয় নজরদারি রেখেছেন শাসকদলের নেতারা। সেক্ষেত্রে এই পরীক্ষা উতরে যেতে না- পারলে কী হবে, তা নিয়েও চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা।
প্রায় ৬৫ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের পরে আজকের এই পরীক্ষা। যোগ্য ও অযোগ্য বিতর্ক, সেই সঙ্গে এই গোটা প্রক্রিয়ায় প্রমাণিত দুর্নীতিতে শাসকের ভূমিকা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক অস্ত্র হয়েছে বিরোধীদের। এই পরিস্থিতিতে রবিবারের পরীক্ষার কয়েক ঘণ্টা আগে সতর্ক শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, এই পরীক্ষা নিশ্চয়ই সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন সম্পন্ন করেই আমরা তাঁদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে পারব।’’ সেই ব্যবস্থার উপর আস্থা রেখেই শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, এরপরেও যদি এ নিয়ে কোনও মামলা ইত্যাদি হয়, তার রায় আমাদের অনুকূলেই যাবে।’’ তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারও মেনে নিয়েছেন যে এ পরীক্ষা শাসক শিবিরেরও। তাঁর কথায়, ‘‘যে পরীক্ষায় রাজ্যের হাজার হাজার ভবিষ্যৎ শিক্ষক জড়িয়ে, তা নির্বিঘ্ন করা অবশ্যই শাসকদলের প্রার্থিত। সে দিক থেকে এ আমাদের প্রত্যেকটি রাজ্যবাসীরই পরীক্ষা।’’
এ বারেও পরীক্ষার দু’দিন আগেই প্রশ্ন ফাঁসের আশঙ্কা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুধু তাই নয়, আগের বাতিল হওয়া চাকরির মতো এ বারেও টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ভোটের কথা মাথায় রেখে এই দুর্নীতির প্রশ্নে শাসকদলকে চাপে রাখতে চেয়েছে বামেরাও। এই আবহে এ দিন বর্ধমানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বলেন, “১৫২ জন দাগিকে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয়াও রয়েছে। ত্রুটিযুক্ত পরীক্ষা, প্রশ্ন বিক্রি হচ্ছে। তৃণমূলের লোকেরা পুলিশকে নিয়ে একটি প্রহসনের পরীক্ষা করতে চলেছে। এর ফল অশ্বডিম্ব হবে।’’ পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়েও সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, “এটা স্বাভাবিক পরীক্ষা নয়। ২০১৬ সালে পরীক্ষা নেওয়া হল। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির জন্য থাকা এসএসসি-র উপরে ভরসা করা কঠিন। সরকার ও এসএসসি দাগিদের পাশে।” পরীক্ষার আগের দিন বিরোধীদের সঙ্গে রাজনৈতিক তরজা এড়িয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘৩ লক্ষ ১৯ হাজার পরীক্ষার্থী। তাঁদের জন্যই সব রকম সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে প্রশাসন।’’
আজ নবম- দশম শ্রেণির ২৩ হাজার ২১২ টি শূন্যপদের পরীক্ষা হবে। উচ্চ মাধ্যমিকের ১২ হাজার ৫১৪ টি পদের জন্য পরীক্ষা হবে আগামী রবিবার ১৪ তারিখ।