বিধানসভা নির্বাচনের আগেই পুলিশে নিয়োগের পরীক্ষা! কনস্টেবল নিয়োগে এ বার বিশেষ কোটা রাখবে নবান্ন
আনন্দবাজার | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে রাজ্যের কর্মসংস্থানের মধ্যে দিয়েও রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এই প্রেক্ষাপটে পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একাধিক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। প্রশাসন সূত্রের খবর, উৎসবের মরসুম কেটে গেলেই, পুলিশের নিচুতলায় কর্মী নিয়োগে পদক্ষেপ করবে রাজ্য সরকার। আর সেই পরীক্ষায় এ বছর থেকেই সিভিক ভলান্টিয়ার, ভিলেজ পুলিশ ও অন্যান্য সহযোগী পুলিশকর্মীরা প্রথম বারের মতো কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় বসতে পারবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁদের জন্য বিশেষ কোটা থাকবে বলেই খবর।
এ পর্যন্ত নিয়ম অনুযায়ী সহযোগী পুলিশকর্মীরা সরাসরি কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারতেন না। এর ফলে দীর্ঘ দিন ধরে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ জমে উঠেছিল। অনেক শিক্ষিত তরুণ-তরুণী সিভিক বা অন্যান্য সহযোগী পদে চাকরিতে যোগ দিলেও স্থায়ী নিয়োগের সুযোগ না থাকায় হতাশ হয়ে পড়তেন। এমনকি অনেকেই বিকল্প পেশার কথা ভাবতে শুরু করতেন। তাঁদের ক্ষোভ মেটাতে এবং স্থায়ী চাকরির সুযোগ করে দিতেই এ বার নবান্নের এই নতুন সিদ্ধান্ত।
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ওয়েলফেয়ার কমিটির প্রস্তাব মেনে নিয়েছে রাজ্য সরকার। ওয়েলফেয়ার কমিটির কর্তারা বেশ কিছু দিন ধরেই স্বরাষ্ট্র দফতরে সহযোগী কর্মীদের দাবি নিয়ে দরবার করছিলেন। তাঁদের প্রস্তাব ছিল, সিভিক ও অন্যান্য সহযোগী কর্মীদের জন্য আলাদা কোটা নির্দিষ্ট করা হোক এবং বয়ঃসীমাতেও বিশেষ ছাড় দেওয়া হোক। একাধিক দফা বৈঠকের পর শেষ পর্যন্ত নবান্ন সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সহযোগী পুলিশকর্মীদের জন্য কনস্টেবল নিয়োগে ১৫ শতাংশ কোটা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের জন্য সর্বোচ্চ বয়ঃসীমা রাখা হয়েছে ৩৫ বছর। ফলে বহু দিন ধরে চাকরি করা সিভিক বা ভিলেজ পুলিশেরাও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, উৎসবের মরসুম কেটে গেলে নভেম্বরেই কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ বারের পরীক্ষায় অন্তত ৫ হাজার সহযোগী কর্মী বসতে চলেছেন বলে অনুমান। তবে একটি বড় সমস্যা থেকেই যাচ্ছে— বেশির ভাগ সহযোগী পুলিশকর্মী প্রতি দিন থানার কাজ, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ বা নিরাপত্তা ডিউটিতে ব্যস্ত থাকেন। ফলে তাঁদের পক্ষে আলাদা করে প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করা কার্যত অসম্ভব।
এই বাস্তব সমস্যার কথা মাথায় রেখেই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ওয়েলফেয়ার কমিটি উদ্যোগী হয়েছে অনলাইন প্রশিক্ষণ চালু করার। কর্মীরা যাতে তাঁদের অবসর সময়ে, বাড়িতে বসেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ওয়েলফেয়ার কমিটির এক কর্তা জানিয়েছেন, “সহযোগী কর্মীরা দীর্ঘ দিন ধরে পুলিশের নানা দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তাঁদের পরিশ্রম এবং অবদান অমূল্য। এ বার তাঁদের জন্য স্থায়ী চাকরির দ্বার উন্মুক্ত হল। আমরা চাই, যত বেশি সম্ভব কর্মী এই পরীক্ষায় সফল হোন।”
রাজনৈতিক মহলের মতে, এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে রাজ্য সরকার এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো, এবং নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষের কাছে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেওয়া। সহযোগী পুলিশকর্মীদের দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হওয়ায় এর রাজনৈতিক লাভও ঘরে তুলতে চাইছে শাসকদল। সব মিলিয়ে নভেম্বরের কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা শুধু পুলিশের ভবিষ্যৎ নয়, রাজনীতির ময়দানেও বিশেষ তাৎপর্য বহন করতে চলেছে।