• শেষপর্যন্ত বাড়ি ফিরতে পারব তো? উৎকন্ঠা নিয়েই পুজোয় ভিন রাজ্যে পাড়ি বাংলার ঢাকিদের...
    আজকাল | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘের আনাগোনা  জানান দিচ্ছে পুজো আসছে। কাশফুলের বনে লেগেছে হিল্লোল। হাতে আর মাত্র অল্প কিছুদিন। তারপরই বাঙালি শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গেলেও  এবছর মুর্শিদাবাদ জেলার নামকরা সব ঢাকিরা দুর্গাপুজোর সময় ভিন রাজ্য ঢাক বাজাতে যাওয়ার আগে  দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে  বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি সন্দেহে মারধর এবং কয়েকজনকে জোর করে  বাংলাদেশে 'পুশব্যাক' করে দেওয়ার ঘটনাও  ঘটেছে। 

    তাই  এবছর দুর্গাপুজোয় মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থেকে ভিন রাজ্যে ঢাক বাজাতে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে চলেছেন এখানকার ঢাকিরা। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থানার অন্তর্গত  বাঁশচাতর গ্রাম। এখানকার ঢাকিদের ঢাকের বোলে এমন  সুরের মূর্ছনা তৈরি হয় যা কোমর দোলাতে বাধ্য করবেই। তাই দুর্গাপুজোর সময় বেলডাঙার ঢাকিদের চাহিদা কেবল দেশের সমস্ত সেরা পুজোয় নয়, বিদেশেও থাকে।

    এই গ্রামের প্রখ্যাত ঢাকি লালু দাস ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্য-সহ লন্ডন, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া ,আমেরিকা ও অন্যান্য আরও একাধিক দেশে নিজের দল নিয়ে ঢাক বাজিয়েছেন। বলিউডের বিখ্যাত গায়ক অভিজিৎ ভট্টাচার্যের পুজোয় নাকি লালু দাসের ঢাকের বাজনা না বাজলে পুজো শুরুই হয় না। তাই গত প্রায় ২৮-২৯ বছর ধরে সেখানে প্রতি বছর ডাক পড়ে লালু এবং তাঁর দলের। এবছরও অভিজিতের দুর্গাপুজোয় ঢাক বাজাবেন লালু এবং তাঁর দল। তবে এবছর দিল্লি ,মুম্বাই ও অন্যান্য রাজ্যে ঢাক বাজাতে যাওয়ার আগে চিন্তায় রয়েছেন মুর্শিদাবাদের ঢাকি এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।

    লালু দাস বলেন,' গত প্রায় ২৮-২৯  বছর ধরে আমি মুম্বাইতে দুর্গাপূজার সময় ঢাক বাজাতে যাচ্ছি।  বেশিরভাগ বছরই আমি গায়ক অভিজিৎ ভট্টাচার্যের আয়োজন করা দুর্গাপূজোয় ঢাক বাজাই। এছাড়াও আমি অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া,আমেরিকার মতো বিভিন্ন দেশ এবং নাগাল্যান্ড ,মনিপুর-সহ দেশের প্রায় সমস্ত রাজ্যের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঢাক বাজিয়েছি।' তিনি বলেন ,'তবে এবছর ঢাক বাজাতে যাওয়ার আগে আমরা যথেষ্টই উদ্বেগে রয়েছি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখেছি মহারাষ্ট্র, দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকরা বাংলায় কথা  বলার জন্য বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁদের উপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।  আমরা বাঙালি, বাংলা ছাড়া অন্য ভাষা জানি না।এবছর ঢাক বাজাতে যাওয়ার সময়  যদি লিখিত কোনও নথি পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া সম্ভব হয় তাহলে আমরা তা নিয়েই যাব। ' লালু দাস জানান, প্রতিবছর মুম্বাইতে তাঁর সঙ্গে ২২ জনের একটি দল ঢাক বাজাতে যেতেন।  কিন্তু এবছর মাত্র ৯ জনের একটি দল  যাচ্ছে। বাঁশচাতর গ্রাম থেকে এবছর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে   অভিযান রিক্রিয়েশন ক্লাবে ঢাক বাজাতে যাচ্ছেন বিখ্যাত ঢাকি বিশ্বনাথ দাস। তিনি বলেন,' এবছর আমাদের গ্রাম থেকে দু'টো দল মুম্বাইতে এবং একটি দল দিল্লিতে ঢাক বাজাতে যাচ্ছে। তবে যাওয়ার আগে আমরা ঢাকিদের বিস্তারিত তথ্য পুলিশ প্রশাসনকে দিয়ে যাব। ' বিশ্বনাথ বলেন,'গত প্রায় কুড়ি বছর ধরে ঢাক বাজানোই আমার প্রধান পেশা। বছরের বাকি সময় সামান্য সোনার কাজ করি। আমাদের গ্রামের বাকি ঢাকিরাও  সারা বছরই বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন। পুজোর সময় যা আয় হয় সেটা দিয়েই আমাদের সারা বছর চলতে হয়।  পুজোর সময় বাড়িতে থাকতে না পারলেও আমরা পৌষ কালী পুজোতে পরিবারের সকলের সঙ্গে আনন্দ করি।' লালু দাস বলেন,' পুজোর সময় ঢাক বাজিয়ে যা আয় হয় সেটাই আমার পরিবারের সারা বছরের খরচ চালানোর প্রধান উৎস। এর বাইরে আমি কখনও দিনমজুরি করি কখনও বা কবি গান বাউল গানের অনুষ্ঠানে ঢাক বাজাই। পুজোর সময় ভিন রাজ্যে ঢাক বাজাতে যেতে না পারলে আমরা পরিবার নিয়ে প্রচন্ড অসুবিধার মধ্যে পড়ব। ' লালু দাসের  স্ত্রী ব্রজবালা দাস বলেন,'আমাদের বাড়ির বেশিরভাগ ছেলেরাই হিন্দিতে কথা বলতে পারে না। কিন্তু ঢাক বাজাতে বাইরে তো তাদেরকে যেতেই হবে। আমরা শুনেছি ভিন রাজ্যে বাংলায় কথা বললে পুলিশ ধরছে।  গ্রামের বেশিরভাগ ঢাকিদের পুজোর সময় ভিন রাজ্যে যাওয়ার  টিকিট কাটা হয়ে গিয়েছে। এবছর উৎকণ্ঠা নিয়ে আমরা পরিবারের লোকেদের ভিন রাজ্যে পাঠাচ্ছি। ' এসডিপিও (বেলডাঙা) উত্তম গড়াই  বলেন,'দুর্গাপুজার সময় ভিন রাজ্যে ঢাক বাজাতে যাওয়ার আগে ঢাকিরা যদি পুলিশের কাছে  'পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট'- এর জন্য আবেদন করেন তাহলে পুলিশ প্রশাসনের থেকে তাঁদেরকে সেই  সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।'
  • Link to this news (আজকাল)