আজকাল ওয়েবডেস্ক: সময়টা ছিল ২০১৯ সালের ৩১শ আগস্ট, মেট্রো রেল কলকাতায় সম্প্রসারণের কারণে হঠাৎ মধ্য কলকাতার বেশ কিছু অংশ তার মধ্যে বিশেষত দুর্গাপিতুরি লেনে হঠাৎ বিপর্যয় নেমে আসে। মধ্য কলকাতার আরও বেশ কিছু অংশেই সমস্যা দেখা গেলেও দুর্গাপিতুরি লেনে ভয়াবহতা ছিল অনেক গুণ বেশি।
সেই রাতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ থেকে হঠাৎ মাইকিং করে জানানো হয়, যে যার মত বাড়ি থেকে যত শীঘ্র সম্ভব বেরিয়ে আসুন কারণ বাড়ি ভেঙে পরতে পারে, ভয়াবহ বিপদ ঘটে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, এই মাইকিংয়ের পরেই এলাকার অধিকাংশ পুরনো বাড়ি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে শুরু করে। ফাটল ধরে অনেক বাড়ির ছাদ ও পাঁচিলে। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলে রাস্তার একাংশ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এ যেন এক বিভীষিকাময় সেই রাত, জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আর মাইকিং শোনার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার বহু গৃহস্থরা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে সমস্ত কিছু স্থাবর অস্থাবর টাকা পয়সা গয়না ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়েন প্রাণ বাঁচাতে। এরপর তাঁদের ঠাঁই হয় কোন ভাড়া বাড়ি অথবা হোটেলে। যদিও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই ব্যবস্থা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষই করেছিল তৎকালীন সময়। তবে, যাদের বাড়ি কম ক্ষতি হয়েছিল সেই পরিবারগুলি বছর ঘুরতেই ফিরে পায় তাদের বাড়ি।
এরপর বহু সময় গড়িয়েছে, অতিক্রান্ত হয়েছে ছ’টি বছর। হয়েছে মেট্রো রেলের সম্প্রসারণ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসে সেই বিন্যাসের জন্য উদ্বোধনও করেছেন কলকাতায়। যুক্ত হয়েছে হাওড়া, শিয়ালদহ, সেক্টর ফাইভ সহ একাধিক জায়গায় মেট্রো রেল পরিষেবা, যাতে শহর কলকাতায় যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়।
যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলেও শহরের বেশ কিছু অংশের নাগরিকদের জীবন বিপর্যয়ের কষ্টটা নেহাত কম হয়নি। মেট্রো সম্প্রসারণ এক প্রকার শেষ হলেও গৃহহীন সেই সমস্ত পরিবারগুলি কিন্তু আজও তারা ফিরে পায়নি তাদের ভিটে। তাদের বসত বাড়িটুকু আজও ফিরে পায়নি শহর কলকাতার বহু পরিবার। কান পাতলে তাদের দীর্ঘনিঃশ্বাস বা কান্নার আওয়াজ বারবার শোনা যায়। স্থানীয়রা জানান, তাঁরা বহুবার মেট্রো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন কিন্তু কোন লাভ হয়নি। মেট্রো কর্তৃপক্ষ বহুবার আশ্বাস দিলেও এই ছয় বছরে কোনও রকম উন্নতি হয়নি বা বাড়ি ফিরে পাওয়ার ন্যূনতম আশার আলোও তাঁরা দেখতে পাননি। স্থানীয়রা আরও জানিয়েছেন, এখনও ২২ থেকে ২৩ টি বাড়ির পরিবার অর্থাৎ কয়েক হাজার দুর্গাপিতুরি লেনের বাসিন্দারা আজও ঘরছাড়া। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এবং মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছে বহুবার বহু আবেদন জানিয়েও কোন ফল পাওয়া যায়নি। পরিবারগুলির দাবি, মেট্রোর তরফ থেকে জানানো হয়েছে ২০২৬ -এর আগে কোনও কিছুই হওয়া সম্ভব নয়, আরও এক বছর সময় লাগবে।
যদিও এ বিষয়ে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের কিছু করার নেই কারণ দুর্গাপিতুরি লেনে যে কাজ করা হচ্ছে সেখানে মাটির তলায় কোথা থেকে বারবার জল আসছে সেটি বুঝে উঠতে পারছেন না। কর্মরত ইঞ্জিনিয়াররাও এ নিয়ে ধন্দ্বে। যতক্ষণ না এর সমাধান হবে ততক্ষণ তারা কোনও কিছুই করে উঠতে পারবেন না।
উল্লেখযোগ্য বিষয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য কলকাতা পুরসভা একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে চলতি সপ্তাহে মেয়র তথা পূর্তমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে মেট্রো কর্তৃপক্ষের বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে দু’একদিনের মধ্যেই একটি মৌ স্বাক্ষর হবে মেট্রোর সঙ্গে। যার মাধ্যমে উল্লেখ থাকবে ২০২৬ সালে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রত্যেকের বাড়ি ফিরিয়ে দিতে হবে। এবার সেই আশাতেই বুক বেধেছে সেই সমস্ত ঘরছাড়া গৃহস্থরা।