২৯ মাস পর মণিপুর সফর ভাবনায় মোদি, মাত্র তিন ঘণ্টার সম্ভাব্য উপস্থিতি নিয়ে তীব্র বিতর্ক...
আজকাল | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর মণিপুর সফরে যেতে পারেন—এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই কংগ্রেস এবং বিরোধী শিবিরের তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। সংঘাতবিধ্বস্ত রাজ্যটি গত ২৯ মাস ধরে প্রধানমন্ত্রীর মনোযোগ থেকে কার্যত বঞ্চিত। এবারও সম্ভাব্য সফরের সময়সীমা মাত্র তিন ঘণ্টা, যা অনেকের কাছে অপ্রতুল ও প্রতীকী প্রদর্শন ছাড়া আর কিছু নয়। কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ একে সরাসরি “অপমান” বলেছেন এবং মন্তব্য করেছেন, “এমন তড়িঘড়ি সফরে তিনি কী-ই বা অর্জন করবেন, নিজের সমর্থকদের করতালি ছাড়া?”
২০২৩ সালের ৩ মে থেকে কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয়াবহ সংঘাত শুরু হয়। শত শত প্রাণহানি, হাজার হাজার ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই, প্রায় ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। সহিংসতার আগুন আজও থামেনি। অথচ প্রধানমন্ত্রী এতদিন সেখানে পা রাখেননি। উত্তর-পূর্বের অন্যান্য রাজ্যে একাধিক সফর হলেও মণিপুর ও মিজোরাম কার্যত উপেক্ষিত থেকেছে। এ কারণে জনগণের ক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, মোদি ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিদেশ সফরকারী প্রধানমন্ত্রী। ২০২৩ সালে তিনি ১০ দেশে ২৫ দিন, ২০২৪ সালে ১৬ দেশে ৩৩ দিন এবং ২০২৫ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৮ দেশে ৩১ দিন কাটিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রাজিল, নামিবিয়া থেকে শুরু করে ছোট দ্বীপরাষ্ট্রও বাদ যায়নি। আরও কয়েকটি সফর আসন্ন মাসগুলোতে নির্ধারিত। দেশের অভ্যন্তরে নির্বাচনী বছরে ১৭৭টি সফর করেছেন তিনি। উত্তর-পূর্বের আসাম, অরুণাচল, ত্রিপুরা, মেঘালয় এমনকি নাগাল্যান্ডও তাঁর প্রচারের মঞ্চ হয়েছে। অথচ মণিপুরে সফরের অভাব এক বড় প্রশ্নচিহ্ন।
জয়রাম রমেশ বলেন, “এটি প্রকৃত সফর নয়, বরং অপমানজনক প্রদর্শনী। ২৯ মাস ধরে অপেক্ষমাণ মানুষদের জন্য মাত্র তিন ঘণ্টা সময় বরাদ্দ করা চরম নির্দয়তা।” তাঁর মতে, প্রধানমন্ত্রীর এই সফর মূলত তাঁর “চিয়ারলিডারদের প্রশংসা কুড়োনোর জন্য” পরিকল্পিত। অন্যদিকে স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের দাবি, তিন ঘণ্টার সফরে কোনো বাস্তব আলোচনার বা সমস্যার সমাধানের সুযোগই নেই। এটি শুধু রাজনৈতিক প্রতীকী উপস্থিতি মাত্র।
৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সফরের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। সংবাদমাধ্যমগুলি “সম্ভাব্য সফর” বলেই রিপোর্ট করছে। ইম্ফল শহর ও আশপাশের হাইওয়েতে নিরাপত্তা বাড়ানো হলেও কুকি-জো সম্প্রদায়ের অবরোধ শিথিলকরণ এবং সড়ক ব্যবহার নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সফরের ভ্রমণপঞ্জি নিঃসন্দেহে ইতিহাসে স্থান পাবে। কিন্তু মণিপুরের সাধারণ মানুষ হয়তো মনে রাখবেন এই দীর্ঘ অপেক্ষা, অস্থিরতার ক্ষত আর ক্ষণিকের আগমন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে প্রশ্ন থেকেই যাবে—কুকি ও মেইতেই আবার কবে সহাবস্থানের পথে ফিরল, রাষ্ট্রপতি শাসন কবে শেষ হলো, আর প্রধানমন্ত্রী সত্যিই তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কি না।