পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে মাত্র এক মাসের শিশুকে বিক্রি! অভাবের তাড়নায় যা করলেন বাবা-মা, শুনলে চোখে জল আসবে ...
আজকাল | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: হৃদয়বিদারক ঘটনা৷ দারিদ্র্য মানুষকে দিয়ে কী কী করাতে পারে তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ সম্প্রতি দেখল দেশবাসী৷ এক মাস বয়সী এক শিশুপুত্রকে তার বাবা-মা মাত্র ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন। সম্প্রতি এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পালামু জেলার লেসলিগঞ্জ এলাকায়। দারিদ্র্যের চরম সীমায় পৌঁছানোর পর এই সিদ্ধান্ত নেন ওই দম্পতি। খবর অনুযায়ী, এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন তৎপর হন। পাশাপাশি শিশুটিকে অবিলম্বে উদ্ধার করার নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশে পুলিশ অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে।
স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ওই ব্যক্তির নাম রামচন্দ্র রাম। খবর মারফত ওই ব্যক্তি উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরের বাসিন্দা হলেও গত ১৫ বছর ধরে স্ত্রী পিঙ্কি দেবীর সঙ্গে পালামুর লোটওয়া গ্রামে বসবাস করছেন। তিনি কাজের অভাবে পরিবার নিয়ে অন্যত্র জীবন যাপন করছিলেন। সম্প্রতি লাগাতার বৃষ্টির কারণে তাঁর দৈনিক মজুরির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসা বা পরিবারের খাবারের ব্যবস্থাও করতে পারেননি ব্যক্তিটি।
রাম জানান, 'আমার স্ত্রী'র চিকিৎসার জন্য বা খাবারের জোগাড় করার মতো কোনও টাকা ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে একটি দালাল দম্পতির কাছে শিশুটিকে বিক্রি করি।' ওই দালাল দম্পতি টাকা পরিশোধের পর শিশুটিকে পাশের জেলা লাতেহারে নিয়ে যায়।
রাম আরও বলেন, 'আমরা গৃহহীন। ভাঙাচোরা একটি ছাউনির নিচে আমাদের আরও চারটি সন্তানসহ রাত কাটে।' পিঙ্কি দেবী বলেন, তাঁর বাবা তাঁকে একটি ছোট জমি দিয়েছিলেন। সেখানে অতি কষ্টে একটি কুঁড়েঘর তৈরি করেছিলেন এই দম্পতি। কিন্তু সেই ঘরটিও নিম্নচাপের বৃষ্টির জেরে ভেঙে পড়ে। এরপর থেকে তাঁরা ছাউনির নিচেই বসবাস করছেন।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, দম্পতিটি সরকারি কোনও কল্যাণমূলক প্রকল্পের আওতায় ছিলেন না। এর কারণ তাঁদের আধার কার্ড বা রেশন কার্ড ছিল না। ফলে তাঁরা সরকারি সাহায্য থেকেও বঞ্চিত হন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজ না থাকলে ওই দম্পতি গ্রামে ভিক্ষা করতেন।
এই ঘটনা সামনে আসার পর, পালামু জেলা প্রশাসন ওই পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়। তাঁদের ২০ কেজি খাদ্যশস্য প্রদান করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবং সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ঘটনার জেরে লেসলিগঞ্জ থানার ওসি উত্তম কুমার রায় জানান, ওই দম্পতির সন্তান উদ্ধারের জন্য পুলিশের একটি দল লাতেহার পাঠানো হয় এবং রবিবার শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। বর্তমানে শিশুটি নিরাপদে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এহেন মর্মান্তিক ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, কীভাবে দারিদ্র্য ও সরকারি সহায়তার অভাবে এক পরিবার চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। এই ঘটনা ঘিরে তীব্র শোরগোল স্থানীয়দের মধ্যে৷ প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ এবং মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শিশুটিকে ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।