'আমি আর কখনও নিজ দেশে ফিরবো না'! ভারত ভ্রমণে এসে এ কী মন্তব্য বিদেশি পড়ুয়ার? অভিজ্ঞতা জানালেন
আজকাল | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: 'আমি আর কখনও নিজ দেশে ফিরব না'। এমনই দাবি করেছেন এক নাইজেরিয়ার পড়ুয়া। পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি ভারতের বিপরীতমুখী এক অভিজ্ঞতা উঠে এসেছে আফ্রিকার এক পড়ুয়ার বয়ানে। তিনি জানিয়েছেন কেন তিনি আর কখনও পশ্চিমে অর্থাৎ নিজ দেশে ফিরে যেতে চান না। যেখানে প্রতি বছর বহু ভারতীয় উচ্চ বেতনের চাকরি, উন্নত জীবনযাত্রা এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধার আশায় বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন, তখন পাস্কাল ওলালেয়ে নামের নাইজেরিয়ার এই ছাত্র ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে, ২০২১ সালে নাইজেরিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ লাগোস থেকে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে তিনি ভারতে চলে আসেন। এখানকার জীবনযাত্রা ও সমাজ তাঁকে এতটাই মুগ্ধ করেছে যে তিনি ইনস্টাগ্রামে, 'হোয়াই আই অ্যাম নেভার মুভিং ব্যাক টু দ্য ওয়েস্ট আফটার লিভিং ইন ইন্ডিয়া? '(“Why I’m Never Moving Back to the West After Living in India”) শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। এই ভিডিওতে তিনি দশটি কারণ তুলে ধরেন কেন তিনি ভবিষ্যতে আর পশ্চিমা দেশে ফিরতে চান না।
তিনি বলেন, ভারতে থেকে তিনি যেন এক মানসিক প্রশান্তির মধ্যে যাপন করেছেন। 'আমি এখানে সকালে ঘুম থেকে উঠে দুশ্চিন্তায় ভুগি না, বরং মনে হয় শান্তিতে আছি।' তিনি জানান, পশ্চিমা দেশগুলোর মতো এখানে তাঁকে তাঁর গায়ের রঙের কারণে হুমকি হিসেবে দেখা হয় না। বরং, এখানে তিনি নিজেকে নিরাপদ ও স্বাভাবিক মনে করেন।
পাস্কাল জানান, ভারতের সমাজ অনেক সহজ। এখানে দেখনদারির সংস্কৃতি নেই, এবং কোনওরকম জোর করে 'হাসল কালচার' চাপিয়ে দেওয়া হয় না। তিনি বলেন, 'আমি আমার পুরুষত্ব প্রকাশ করতে পারি এখানে, সেটাকে কেউ 'টক্সিক' হিসেবে দেখে না।' ভারতের সমাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'মানুষ এখানে সোজাসাপটা কথা বলে, ভদ্রতার মুখোশ পরে না, কিন্তু সেই সোজাসাপ্টা কথাগুলো সৎ।'
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক যেটা তিনি উল্লেখ করেন, তা হলো- ভারতে তিনি প্রতিনিয়ত তাঁর কৃষ্ণাঙ্গ পরিচয় স্মরণ করিয়ে দেওয়ার অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন না। তিনি বলেন, 'আমার গায়ের রঙ আমার সম্পূর্ণ পরিচয় নয় এখানে। আমি মানুষ হিসেবেই এখানে মূল্য পাই।'
পশ্চিমের তুলনায় ভারতের রাস্তায় রাতে হাঁটার সময় তিনি নিজেকে অনেক বেশি নিরাপদ বোধ করেন বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, 'আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যতটা অনিরাপদ বোধ করতাম, ভারতের রাস্তায় রাতে হাঁটার সময় তা অনুভব করি না।' পাশাপাশি, তিনি জানান, ভারতের জীবনযাত্রা অনেক সাশ্রয়ী -'বাসাভাড়া সস্তা, খাবার প্রাকৃতিক এবং জীবন অনেক কম জটিল।'
সবশেষে তিনি বলেন, 'এখানে আমি সত্যিকারের স্বাধীনতা অনুভব করি। শুধু কাগজে লেখা স্বাধীনতা নয়। এবং সবচেয়ে বড় কথা, মানুষ আমাকে সম্মান করে আমার চেহারা দেখে নয়, আমি কে, সেটা দেখে।'
এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অসংখ্য মানুষ এর প্রতিক্রিয়া জানায়। কেউ বলেন, 'আমরা কখনও গায়ের রঙ দেখে মানুষকে বিচার করি না, আপনাকে এখানে খুবই স্বাগত।' অন্য একজন মন্তব্য করেন, 'আপনি যে ভারতের ছোট ছোট ভালো দিকগুলোকে মূল্য দিচ্ছেন, সেটা অন্যদের জন্য ভালো উদাহরণ।' কেউ আবার লেখেন, 'আমরা সবাই এক। এখানে বর্ণবাদের কোনও স্থান নেই।'
আরেক ভিডিওতে পাস্কাল বলেন, তিনি ভারতে কখনও এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হননি যেখানে কেউ তাঁকে বলেছে 'নিজের দেশে ফিরে যাও।' অথচ পশ্চিমা দেশগুলোতে এটি খুবই সাধারণ একটি বিষয়।
পাস্কালের এহেন অভিজ্ঞতা এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে, যা ভারতে বসবাসরত বিদেশিদের জীবনযাত্রা এবং সামাজিক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নতুন আলো ফেলেছে। ভারত তার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং অতিথিপরায়ণ মনোভাব দিয়ে অনেকের হৃদয় জয় করে চলেছে। পাস্কাল ওলালেয়ের গল্প সেটারই এক জীবন্ত প্রমাণ।