প্রকাশ্যে ভরাট হচ্ছে তারাপীঠের ঐতিহ্যবাহী ‘পূর্বসাগর’, প্রতিকার চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি
বর্তমান | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: প্রকাশ্যে ভরাট হচ্ছে তারাপীঠের ঐতিহ্যবাহী ‘পূর্বসাগর’। কথিত আছে, মা তারা নিজে এই পুকুর ব্যবহার করেন। সেই জলাশয়ই তিন বছর ধরে একটু একটু করে ভরাট হয়ে চলেছে। অভিযোগ, সবটাই প্রশাসনের নাকের ডগায় চললেও তারা চোখে ঠুলি পরে আছে। নোটিশের পর নোটিশ দিয়ে দায় সেরেছে ভূমিদপ্তর। আইনি কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এই অবস্থায় পুকুরটি রক্ষা করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন তাঁরা।
তারাপীঠের প্রাচীন পুকুরগুলির মধ্যে অন্যতম ‘পূর্বসাগর’। এই নামেই তারাপীঠের মূল রাস্তা থেকে মন্দিরের ভিভিআইপি গেটের সংযোগস্থল পর্যন্ত রাস্তার নাম পূর্বসাগর মোড়। প্রায় তিন একর জায়গাজুড়ে থাকা পুকুরে পুণ্যার্থীরা স্নান করে মায়ের কাছে পুজো দেন। গেরস্থালির কাজেও অনেকে পুকুরটি ব্যবহার করেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত কয়েকবছরে তারাপীঠে জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় এই পুকুরের উপরও নজর পড়েছে অসাধু কারবারিদের। দোকান, লজ, হোটেল তৈরির উদ্দেশ্যে সংগঠিত একটি চক্র মাটি, রাবিশ, আবর্জনা ফেলে পুকুর ভরাট করছে। কোথাও আবার ভরাট করা অংশে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা করে দিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষই। স্থানীয়রা বলছেন, পুকুর সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর বহুতল লজ গড়ে উঠেছে। অথচ, আগুন লাগলে জল পাওয়া যাবে কোথায়, ভাবছে না কেউ।
তারাপীঠে প্রায়শই প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের আনাগোনা লেগে থাকে। রয়েছে তারপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ। অভিযোগ, তারাও উদাসীন। পুকুরকে আগের অবস্থায় ফেরানোর দাবিতে ২০২২ সালে প্রশাসনের সর্বস্তরে অভিযোগ জানান স্থানীয়রা। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে রামপুরহাট-২ বিএলএলআরও’র পক্ষ থেকে মাপজোক করে ১৫ দিনের মধ্যে ভরাট অংশ আগের অবস্থায় ফেরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে সেই নির্দেশ আর কার্যকর হয়নি। ২০২৪ সালে এনিয়ে ব্যাপক হইচই শুরু হলে ২৮ জন ভরাটকারীকে নোটিশ দেন বিএলএলআরও। তাতে বলা হয়, আইন অনুযায়ী পুকুর বাধ্যতামূলকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু পরবর্তী ফিল্ড ভেরিফিকেশেন দেখা যায়, ভূমির মূল চরিত্র পরিবর্তন করা হয়েছে। আইনের বিধানও লঙ্ঘন করা হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পূর্বের অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়। আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মহকুমাশাসক সৌরভ পান্ডেও। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি প্রশাসনের। আর এতেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভরাটকারীরা। বর্তমানে জেসিবি দিয়ে পুকুর ভরাট চললেও প্রশাসন নির্বিকার। তাই ঐতিহ্যবাহী পুকুর বাঁচাতে ডাকযোগে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারাপীঠের পাল ও পান্ডাপাড়ার বাসিন্দারা লিখেছেন, ‘আপনি মা তারাকে ভালোবাসেন এবং শ্রদ্ধা করেন। তারাপীঠের গর্ব পূর্বসাগর পুকুরটি আবর্জনামুক্ত করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিন।’ এলাকার তৃণমূল নেতা তথা উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার মুখোপাধ্যায় নিজেই হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘বহুবার প্রশাসনের নজরে নিয়ে এসেছি বিষয়টি। কিন্তু কোনও কাজ হচ্ছে না।’ বিএলএলআরও তাপস পাল বলেন, ‘গত বছর নোটিশ করার পরেই কোর্টে মামলা হয়। বিচারধীন বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। তবে মামলা চলাকালীন কোনও কাজ করা যায় না।’ মহকুমাশাসক ছুটিতে থাকলেও এই বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন। -নিজস্ব চিত্র