কয়েক মাস আগে বাংলা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছেলেমেয়ে বিহারে স্কুল শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা দিতে যাওয়ায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। রবিবার এসএসসি-র শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় তার উল্টো ছবি দেখা গেল। বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ থেকে কয়েকশো ছেলেমেয়ে শুধু পুরুলিয়া জেলাতেই পরীক্ষা দিতে এলেন। সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা দিতে পেরে স্বস্তি নিয়েই বাড়ির পথে রওনা দিলেন আদিত্যা যোগীর রাজ্যের যুবক-যুবতীরা। এর পরেই তৃণমূল নেতৃত্ব উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ডবল ইঞ্জিনের সরকারকে কটাক্ষ করেছে।
উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকার পরীক্ষার্থীরা শনিবার পুরুলিয়া আসেন। এ দিন তাঁরা পুরুলিয়া শহর, জয়পুর, ঝালদা, পুঞ্চা প্রভৃতি ব্লকে পরীক্ষা দিতে যান। তাঁরাই জানান, উত্তরপ্রদেশের অন্তত একশোজন পুরুলিয়ায় হিন্দি ভাষার জন্য পরীক্ষা দিতে এসেছেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ থেকে এখানে কেন চাকরির সন্ধানে তাঁদের আসতে হচ্ছে? ওই পরীক্ষার্থীদের অনেকের দাবি, সে রাজ্যে সরকারি চাকরির পরীক্ষার সুযোগ বর্তমানে কমে গিয়েছে। তাই তাঁরা ভিন্ রাজ্যে চাকরির পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন। আজমগঞ্জের আলোক তিওয়াড়ি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে কর্মসংস্থান নিয়ে সরকার যে প্রচার করে, তার সঙ্গে বাস্তবের অনেকাটাই ফারাক। যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে বেকারত্ব একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
কিন্তু এ রাজ্যে এসএসসির নিয়োগ ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। সেক্ষেত্রে কি স্বচ্ছ ভাবে চাকরি পাওয়ার বিষয়ে তাঁরা আশাবাদী? অলোক তেওয়াড়ি, প্রবীণ কুমারদের দাবি, ‘‘সমস্ত সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেই কমবেশি কিছু দুর্নীতি হয়েই থাকে। সে জন্য আমরা যদি আর পরীক্ষায় না বসি, তাহলে চাকরির সুযোগটাই হাতছাড়া হবে।” তবে এ বারে আদালতের নির্দেশে চাকরির পরীক্ষা হওয়ায় নিয়োগে দুর্নীতি হবে না বলে আশা প্রকাশ করছেন উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের বড় অংশ।
সেই আশা নিয়েই রঘুনাথপুর হাই স্কুলে পরীক্ষা দিতে আসেন ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের মহুদামোড় এলাকার বাসিন্দা বিশেষভাবে সক্ষম টুম্পা ধীবর। স্বামীর মোটরবাইকে সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন টুম্পা। তিনি বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডেও বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছি। পশ্চিমবঙ্গে এ বার স্বচ্ছ ভাবে নিয়োগের আশা থাকায় পরীক্ষা দিতে এসেছি।’’
এই সুযোগে বিজেপিকে বিঁধতে ছাড়েনি তৃণমূল। দলের রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বেলথরিয়া জানান, তিনি নিজেও এ দিন উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা কয়েকজন পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অভিজ্ঞতা জেনেছেন। সৌমেন বলেন, ‘‘নির্বাচনী প্রচারে এসে বিজেপির নেতানেত্রীরা তাঁদের ডবল ইঞ্জিনের সরকার গুজরাত, উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে তুলনা করে আমাদের রাজ্য পিছিয়ে রয়েছে বলে দাবি করেন। অথচ উত্তরপ্রদেশের পরীক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সে রাজ্যে সরকারি চাকরির সুযোগ কার্যত নেই। এ রাজ্যে সরকারি চাকরির সুযোগ ক্রমশ বাড়ছে বলেই ভিন্ রাজ্যের ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিতে আসছেন।’’
পাল্টা বিজেপির রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী দাবি করেন, ‘‘এ রাজ্যে চাকরির পরীক্ষায় কী ভাবে দুর্নীতি হয়, সেটা দেখতেই উত্তরপ্রদেশ থেকে ছেলেমেয়েরা এসেছিলেন। কিন্তু এ রাজ্যে কর্মসংস্থানের শোচনীয় অবস্থা। সে জন্য বাংলার লক্ষ লক্ষ যুবককে উত্তরপ্রদেশে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে যেতে হচ্ছে।’’
এসএসসির পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ারপার্সন সাধনা খাওয়াস জানান, উত্তরপ্রদেশ-সহ অন্যান্য রাজ্যের শতাধিক পরীক্ষার্থী পুরুলিয়ায় এ দিন শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘অতীতের তুলনায় এ বার এসএসসিতে শূন্যপদের সংখ্যা অনেক বেশি। সেই বিজ্ঞপ্তি দেখেই ভিন্ রাজ্য থেকে পরীক্ষার্থীরা এখানে পরীক্ষা দিতে এসেছেন। পরীক্ষাপরিচালনা যাতে সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে হয়, তা এসএসসি নিশ্চিত করেছিল। সেটাই ভিন্ রাজ্যের পরীক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেছে। ওই পরীক্ষার্থীরাও জানিয়ে গিয়েছেন, পরীক্ষা পুরোপুরিসুষ্ঠু ভাবে হয়েছে।”