আজ উচ্চ মাধ্যমিক, ওএমআর শিটেই পরীক্ষা দেবে ছাত্রছাত্রীরা
আনন্দবাজার | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজ, সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে নতুন পদ্ধতির উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম সিমেস্টার। এই প্রথম স্কুল স্তরের কোনও পরীক্ষা ওএমআর শিটে হচ্ছে। প্রচলিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পদ্ধতিকে ভেঙে, সিমেস্টার প্রথা চালু করার পরে এই প্রথম পরীক্ষা হচ্ছে। আদতে সিমেস্টারের প্রথম এবং দ্বিতীয়টির মূল্যায়নের উপরে আগামী দিনে পড়ুয়াদের উচ্চ মাধ্যমিকের চূড়ান্ত মেধা তালিকা তৈরি হবে।
যদিও এ বার শিক্ষামহলের প্রধান মাথাব্যথা ওএমআর শিট। জানা গিয়েছে, প্রশ্নপত্র এবং ওএমআর শিট সর্বত্র ঠিক সময়ে পৌঁছায়নি। যেমন, খোদ জেলাসদরের শিক্ষকদের দিনভর চরম উৎকণ্ঠায় রেখে শনিবার দুপুরে কৃষ্ণনগর ট্রেজারিতে প্রশ্নপত্র ইত্যাদি নিয়ে গাড়ি পৌঁছায়। সেখানে দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর শেষ বিকেলে ওএমআর, প্রশ্নপত্র ট্রেজারিতে রাখা হয়। যদিও সেগুলি মিলিয়ে দেখে নেওয়ার কাজ করা শনিবারে সম্ভব হয়নি। রবিবার সেগুলি মিলিয়ে দেখা হয়। পাশাপাশি, জানা গিয়েছে গয়েশপুর, তাহেরপুর, নবদ্বীপ বা কৃষ্ণনগর-সহ বিভিন্ন জায়গায় যত ওএমআর শিট বা প্রশ্নপত্র দরকার, তা প্রয়োজনের তুলনায় কম এসেছে। কৃষ্ণনগর যত প্যাকেট আসার কথা ছিল, তার তুলনায় বেশ কয়েক প্যাকেট কম এসেছে।
এই প্রসঙ্গে নদিয়া জেলার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আহ্বায়ক তথা তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের নদিয়া উত্তরের সভাপতি দিলীপ সিংহ বলেন, “ট্রেজারিতে সব নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রবিবার সেগুলি মিলিয়ে দেখা হয়।” কিন্তু যে সব জায়গায় প্রশ্নপত্র কম আছে বা রবিবার মেলাতে গিয়ে যদি আরও কিছু কম পাওয়া যায়, তখন কী হবে? জবাবে জেলার পরীক্ষা আহ্বায়ক বলেন, “বিষয়গুলি ইতিমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব সময়মতো পৌঁছে যাবে। কোনও অসুবিধা হবে না।”
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরের তথ্য বলছে— ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে নদিয়ায় নতুন ধরনের পদ্ধতির উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সংখ্যার নিরিখে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। এ বার জেলায় মোট উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৮৮৭৭ জন। তার মধ্যে ছাত্র ২০৪৯৬ জন এবং ছাত্র ১৮৩৮১ জন। যদিও এ বার শিক্ষকদের চিন্তা বাড়াচ্ছে মূলত ওএমআর শিট সংক্রান্ত বিবিধ জটিলতা। কত জন পড়ুয়া ঠিকমতো ওএমআর শিট পূরণ করতে পারবে, তা নিয়েই সন্দিহান অধিকাংশ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা। বিশেষ, গ্রামীণ এলাকার বিদ্যালয়ের পড়ুয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা আরও প্রকট হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
কৃষ্ণনগর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলছেন, “আমার মনে হয়েছে, যে সব ছেলেমেয়েরা সে ভাবে লেখাপড়ার সঙ্গে যুক্ত নয় তাদের ওএমআর পূরণ করতে খুব অসুবিধা হবে।” বিদ্যালয় প্রধানদের অনেকেই মনে করছেন, এ জন্য উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের স্কুল না আসার প্রবণতা অনেকাংশে দায়ী। তা ছাড়া, বছরে দু’বার করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হওয়ায় বাকি ক্লাসের পঠনপাঠনে অনেক সময় কমে গেল।
যদিও অঞ্জনগড় হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুপ্রতীপ রায়ের অভিমত, যদি অসুবিধা হয় তার জন্য দায় শিক্ষক তথা স্কুলের। তিনি বলেন, “যখন থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে সিমেস্টার চালু হল তখন থেকেই তো আমরা জানতাম পরীক্ষা ওএমআর শিটে হবে। তা হলে স্কুলে আগাম অভ্যাস করানো দরকার ছিল। একাদশের পরীক্ষা ওএমআর শিটে নিলে, মক টেস্ট নিলে সমস্যা থাকত না। এখন সমস্যা হলে দায় আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না।”
সব মিলিয়ে পড়ুয়াদের ঠিক ভাবে ওএমআর শিট পূরণ করানোই এখন সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জস্কুলগুলির কাছে।
উচ্চ মাধ্যমিক: নদিয়া প্রথম সিমেস্টার
মোট পরীক্ষার্থী: ৩৮৮৭৭
ছাত্র: ১৮৩৮১
ছাত্রী: ২০৪৯৬
প্রধান পরীক্ষা কেন্দ্র: ৩৬
অতিরিক্ত পরীক্ষা কেন্দ্র: ১০৫
শুধু ছাত্রী পরীক্ষা কেন্দ্র: ১২
শুধু ছাত্র পরীক্ষা কেন্দ্র: ৮
সম্মিলিত পরীক্ষা কেন্দ্র: ১২১
মোট পরীক্ষা কেন্দ্র: ১৪১
সংবেদনশীল পরীক্ষা কেন্দ্র: ১৮ (তথ্যসূত্র: জিআই দফতর)