নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ‘গানম্যান’ অফিসারের চেয়ারে বসে মৃত্যুর শংসাপত্র (ডেথ সার্টিফিকেট) তৈরির জন্য পুরসভার নির্ধারিত টাকা নিচ্ছেন। তিনিই আবার ফর্ম পূরণ করাচ্ছেন মৃতের পরিজনকে দিয়ে। মৃত্য়ুর শংসাপত্রও নিতেহচ্ছে তাঁর হাত থেকেই। নিমতলা শ্মশানের অফিসঘরের যদি এই পরিস্থিতি হয়, তা হলে নীচে দাহকাজের জায়গার অবস্থা আরও সঙ্গিন। সেখানে ‘ডিসপ্লে বোর্ড’ যে অকেজো হয়ে দীর্ঘদিন পড়ে রয়েছে, সে দিকে নজর দেওয়ার কেউ নেই। তেমনই বুঝে ওঠা যাচ্ছে না, কে শ্মশানের কর্মী, আর কে বাইরের লোক! পুরসভার নির্দিষ্ট করে দেওয়া পোশাকবিধি থাকলেও তা পরার বালাই নেই প্রায় কারও।
শ্মশানে শেষকৃত্যে আসা লোকজনের থেকে প্রতি পদে টাকা দাবি করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ সামনে আসার পরে শনিবার পরিদর্শনে গিয়েছিলেন কলকাতারডেপুটি মেয়র তথা মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ। সেই সময়েই সামনে আসে নিমতলা শ্মশানের এমনই নানা অনিয়মের চিত্র। শ্মশানের কর্মী থেকে পুরসভার নিযুক্ত লোকজনকে কার্যত দাঁড় করিয়ে ভর্ৎসনা করেন ডেপুটি মেয়র। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘শোকে বিহ্বল মৃতের পরিজনদের থেকে টাকা চাওয়া হচ্ছে! এর চেয়ে লজ্জার, অন্যায়ের কিছু হতেপারে না। এই দুর্নীতির শিকড় কোথায় আমরা জানি। এক সময়ে নিজে হাতে এ জিনিস বন্ধ করেছিলাম। করোনার পরে আবার ধীরে ধীরে বেড়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসাবে বদলি করে দেওয়াহবে। সাব-রেজিস্ট্রারদের সতর্ক করা হচ্ছে, এর পরেও অভিযোগ এলে, অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে সাসপেনশনের অর্ডার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে।’’
ভুক্তভোগীদের দাবি, শ্মশানে দেহ নামানোর পরে হাসপাতালের দেওয়া কাগজে স্ট্যাম্প মারার জন্য টাকা চাওয়া হয়। এর পরে ফর্ম ফোটোকপি করে আনতে বলা হয় মৃতের পরিজনকেই। শ্মশানেরবাইরে চায়ের দোকানে পাঁচ টাকায় সেই ফর্ম বিক্রি হয়। এর পরে কাগজ করাতে, চিতাভস্ম পেতে এবং শেষে মৃত্যুর শংসাপত্র করাতেও দফায় দফায় হাজার হাজার টাকা চাওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে অতীন শনিবার ঘুরে দেখেন শ্মশান চত্বরেরপুরোটাই। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা রণিতা সেনগুপ্ত ওকলকাতা পুরসভার অন্য পদস্থ কর্তারা।
অতীন জানিয়ে দেন, এই দুর্নীতির মাথাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে। কোনও নিরাপত্তারক্ষীকে দিয়ে অফিসারের কাজ করানো যাবে না। তিনি মনে করান, ফর্ম দেওয়া পুরসভারই কাজ। কোনও মৃতের পরিজনকে ফর্মের ফোটোকপি করিয়ে আনতেবলা যাবে না। তাঁর কথায়, ‘‘২০ হাজার ফর্ম এখনই ছাপানো রয়েছে। সেগুলি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আরও ফর্ম পুরসভা পাঠাবে।’’ এর পরেক্যামেরায় ঘেরা জায়গায় হাসপাতালের কাগজে স্ট্যাম্প দেওয়ার ডেস্ক বসানোর নির্দেশ দেন তিনি। সেই সঙ্গেইশ্মশান চত্বরে টাকা চাইলে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি সংক্রান্ত পোস্টার দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। পরে শ্মশান চত্বরের চায়ের দোকানে গিয়েও ফর্ম বিক্রি করলে গ্রেফতারির হুঁশিয়ারি দিয়ে এসেছেন ডেপুটি মেয়র।