• ‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া ২০২৩’ কোথায়? অপরাধ পরিসংখ্যান প্রকাশে বিলম্ব নিয়ে উদ্বেগ
    আজকাল | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য তথ্য ভালো শাসন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। অপরাধ প্রবণতা চিহ্নিত করা থেকে শুরু করে নীতি নির্ধারণ পর্যন্ত, সব ক্ষেত্রেই পরিসংখ্যান অপরিহার্য। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলিও বিশ্বজুড়ে তথ্যভিত্তিক পারফরম্যান্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু ভারতে বর্তমানে তথ্য বিকৃতি ও গোপনের অভিযোগ ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো, বিহারের ভোটার তালিকায় হাজার হাজার নাম অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ এবং মহারাষ্ট্রের ‘লাড়কি বহিন যোজনা’-য় ভুয়োভাবে বিপুলসংখ্যক নাম নিবন্ধনের ঘটনা।

    তবে আরও গুরুতর প্রশ্ন এখন উঠছে—‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া ২০২৩’ প্রতিবেদন এখনও প্রকাশিত হলো না কেন?

    জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরো (NCRB)-এর এই বার্ষিক প্রতিবেদনটি ভারতের অপরাধ পরিসংখ্যানের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দলিল। এটি সাধারণত প্রতিবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে প্রকাশিত হয়। কিন্তু বর্তমানে ব্যুরোর ওয়েবসাইটে সর্বশেষ তথ্য রয়েছে কেবল ২০২২ সালের। ফলে ২০২৩ সালের তথ্য অনুপস্থিত থাকায় গবেষক, পুলিশ পেশাজীবী, বিচার বিভাগীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সমাজবিজ্ঞানীরা কার্যত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

    পুলিশ স্টেশন থেকে সংগৃহীত তথ্য ধাপে ধাপে জেলা সদর, রাজ্য সদর দপ্তর, তারপর NCRB-তে পৌঁছে চূড়ান্তভাবে যাচাই করে ‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া’ প্রকাশ করা হয়। এতে শুধু সাধারণ অপরাধ নয়, বরং সংবেদনশীল বিষয় যেমন—দুর্নীতি, মানবপাচার, শিশু ও নারী নির্যাতন, পরিবেশ-সম্পর্কিত অপরাধ, সাইবার অপরাধ, জাতিগত ও বর্ণভিত্তিক নির্যাতন, এমনকি কাস্টডিয়াল ক্রাইম পর্যন্ত বিশদভাবে অন্তর্ভুক্ত থাকে।

    নয়ডা ও পুনেতে সাম্প্রতিক পণপ্রথাজনিত দুই তরুণীর মৃত্যুর ঘটনার পর অনেকেই খুঁজে দেখছিলেন চার্জশিট ও দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার সম্পর্কিত তথ্য। কিন্তু নতুন তথ্যের অনুপস্থিতি তাদের হতাশ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন ফৌজদারি আইন (‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সনহিতা’, ‘ভারতীয় ন্যায় সনহিতা’ ও ‘ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম’) কার্যকর হওয়ায় তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় কিছুটা বিলম্ব ঘটতে পারে। কিন্তু ২০২৩ সালের প্রতিবেদন আটকে যাওয়া অস্বাভাবিক।

    প্রাক্তন কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা বলছে, অনেক সময় মন্ত্রকের স্তরে এই ধরনের প্রতিবেদন আটকে যায়। কৃষক আত্মহত্যা সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশে অতীতে আপত্তি উঠেছিল। পরে মন্ত্রকের হস্তক্ষেপে তা প্রকাশিত হয়। তাই এবারও রাজনৈতিক কারণে ‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া ২০২৩’ প্রকাশ বিলম্বিত হচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

    সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই বিলম্ব শুধুমাত্র তথ্যপ্রবাহের সমস্যা নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও গণসুরক্ষার ক্ষেত্রেও বিপজ্জনক। অপরাধ প্রবণতা ও বিচার প্রক্রিয়ার দুর্বল দিক চিহ্নিত না হলে যথাযথ নীতি প্রণয়ন সম্ভব নয়। ফলে অপরাধ দমন কার্যত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা: ‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া ২০২৩’-এর অনুপস্থিতি কেবল গবেষণা ও নীতি প্রণয়নকেই বাধাগ্রস্ত করছে না, বরং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলছে।
  • Link to this news (আজকাল)