আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে আরও একটি ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড। প্রতারণা ও প্রতিশোধস্পৃহায় নৃশংসভাবে খুন করা হল এক বৃদ্ধকে। তাঁকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন তৃতীয় স্ত্রী। যাঁর দিদির সঙ্গে দ্বিতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন মৃত ব্যক্তি।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের অনুপ্পুর জেলার এক গ্রামে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এক কুয়ো থেকে এক বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। চটের ব্যাগের মধ্যে ছিল বৃদ্ধের দেহ। কম্বল দিয়ে মোড়ানো ছিল দেহটি। সাধারণ খুনের ঘটনা এটি নয়। প্রতারণা ও প্রতিশোধস্পৃহার জেরেই বৃদ্ধকে খুন করা হয়েছে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, অনুপ্পুর জেলার সাকারিয়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। মৃতের নাম, ভাইয়ালাল রাজাক। ৬০ বছর বয়সি বৃদ্ধের ব্যক্তিগত জীবন অত্যন্ত জটিল। যার জেরে তুমুল অশান্তি ছিল। ভাইয়ালাল তিনবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
প্রথম স্ত্রী ভাইয়ালালকে ছেড়ে চলে যান। দ্বিতীয় স্ত্রী গুড্ডি বাইয়ের সঙ্গে সুখে থাকলেও, তিনি কোনও সন্তানের জন্ম দেননি। যার জেরে আরও একটি বিয়ের পরিকল্পনা করেন ভাইয়ালাল। তখনই গুড্ডি বাইয়ের বোন মুন্নির প্রেমে পড়েন। তখনই তৃতীয়বার বিয়ে সারেন ভাইয়ালাল। মুন্নিকে বিয়ে করেন। তৃতীয় স্ত্রী দুই সন্তানের জন্ম দেন। ভাইয়ালালকে বিয়ে করলেও মুন্নিকে ভালবাসত অন্য এক যুবককে।
স্থানীয় প্রপার্টি ডিলার নারায়ণ দাস কুশওয়ার সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন মুন্নি। ক্রমেই তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক আরও গভীর হতে থাকে। সারাজীবন একসঙ্গে থাকার পরিকল্পনাও করেন। সেই কারণেই ভাইয়ালালকে খুনের পরিকল্পনা করেন। মুন্নির স্বামী ভাইয়ালালকে খুনের জন্য ২৫ বছরের এক তরুণ ধীরজকে দায়িত্ব দেন নারায়ণ।
গত ৩০ আগস্ট রাতে ভাইয়ালাল তাঁর নির্মীয়মাণ বাড়ির বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলেন। তখনই চুপিচুপি সেই ঘরে ঢোকেন ধীরজ ও নারায়ণ। লোহার রড দিয়ে সজোরে আঘাত করে ভাইয়ালালের মাথা থেঁতলে দেন। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর মৃতদেহটি কম্বলে জড়িয়ে ব্যাগে ভরে দেন। ব্যাগটি কাপড় দিয়ে বেঁধে গ্রামের এক কুয়োয় ফেলে দেন।
এই ঘটনার পরদিন সেই কুয়ো থেকে জল তুলতে গিয়েছিলেন ভাইয়ালালের দ্বিতীয় স্ত্রী গুড্ডি। তখনই তাঁর নজরে পড়ে, কুয়োর জলে কিছু একটা ভাসছে। সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাসীদের তিনি ডাকেন। তাঁদের থেকে খবর পেয়েই ছুটে আসে পুলিশ। তড়িঘড়ি করে কুয়ো থেকে বস্তাবন্দি দেহটি উদ্ধার করে তারা। বস্তাটি খুলতেই ভাইয়ালালের দেহ শনাক্ত করেন গ্রামবাসীরা। সেই মুহূর্তে সকলেই আঁতকে ওঠেন। সেই কুয়ো থেকে ভাইয়ালালের ফোনটিও উদ্ধার করে পুলিশ।
দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, ভাইয়ালালকে মাথায় আঘাত করে খুন করা হয়েছে। ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে খুনের কিনারা করে পুলিশ। পুলিশ আধিকারিক মতিউর রহমান জানিয়েছেন, ভাইয়ালালের তৃতীয় স্ত্রী মুন্নি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সেই সম্পর্কের জেরেই ভাইয়ালালকে খুন করা হয়। খুনের পর দেহটি কুয়োয় ফেলে দেন তাঁরা। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত মুন্নি, নারায়ণ ও ধীরজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।