আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফুলেরা নয়। খাস দিল্লি। তবে ঘটনাপ্রবাহ দেখে ফুলেরা আর দিল্লিকে এক সরলরেখাতেই জুড়ছেন আপ নেতারা। তাতে সায়ও দিচ্ছেন অনেকেই। আর এই গোটা ঘটনা আবর্তিত হচ্ছে মূলত যাঁকে নিয়ে, বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছেই না তাঁর। কোনওভাবেই। কেজরিওয়াল পরবর্তী জমানার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। দিন কয়েক আগেই তাঁর ঘরে ঢুকে তাঁর উপরে হালমা চালিয়েছিলেন জনৈক ব্যক্তি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে চড় থাপ্পড় মারা হয় ঘরে ঢুকেই। এবার বিপত্তি আরও একধাপ এগিয়ে। অভিযোগ, দিল্লির সরকারি বৈঠকে হাজির হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর স্বামী।
রেখার স্বামী, মনীশ গুপ্তা। তিনি দিল্লি সরকারের কেউ নন। কিন্তু তাঁকে নাকি বৈঠকে হাজির থাকতে দেখা গিয়েছে। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, শালিমারবাগের একটি অনুষ্ঠানে মনীশকে হাজির থাকতে দেখা গিয়েছে। বিরোধীরা স্বাভাবিকভাবেই গোটা ঘটনাটিকে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেছেন। কেউ কেউ আবার ঘটনাটিকে ওয়েব সিরিজ পঞ্চায়েতের সঙ্গে তুলনা করেছেন। মন্তব্য করেছেন, ফুলেরার মতো সিস্টেম নাকি চলছে দিল্লিতেও। অর্থাৎ পদে কেউ, পিছন থেকে গোটা বিষয় চালাচ্ছেন তাঁর স্বামী।
রেখা গুপ্তার স্বামী, কে এই মনীশ গুপ্তা? কী পরিচয় তাঁর?
মনীশ গুপ্ত একজন দিল্লি-ভিত্তিক ব্যবসায়ী এবং সমাজকর্মী। এবং অবশ্যই দেশের রাজধানীতে এই মুহূর্তে তাঁর আরও একটি পরিচয়, তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী, রেখা গুপ্তার স্বামী।
রেখা গুপ্তের ২০২৫ সালের নির্বাচনী হলফনামা অনুসারে, মনীশ গুপ্তা নিকুঞ্জ এন্টারপ্রাইজেস নামে একটি ফার্মের মালিক, ওই ফার্মটি সম্ভবত তাঁদের ছেলের নামে। হলফনামা অনুসারে, তিনি কোটাক লাইফ ইন্স্যুরেন্সের একজন এজেন্সি সহযোগীও।
মনীশের আয় কোথা থেকে? মূলত ব্যবসা, বেতন, শেয়ার ব্যবসা, সুদের আয় এবং কমিশন থেকে আয় করেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তাঁর ঘোষিত মোট আয় ছিল ৯৭ লক্ষ টাকা।
নির্বাচনী হলফনামা অনুসারে, মনীশের নগদ টাকা সেই সময়ে ছিল ১৫.৭ লক্ষ টাকা, এবং তিনি বন্ড, ডিবেঞ্চার, এনপিএস, এলআইসি পলিসিতেও অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন।
এই বছরের শুরুতে বিজেপি নেতৃত্ব যখন রেখা গুপ্তাকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করে, তখন তিনি তার রাজনৈতিক যাত্রায় সমর্থনের জন্য তার স্বামী মনীশ গুপ্তাকে কৃতিত্ব দিয়েছিলেন। সংবাদ মাধ্যমে রেখা সেই সময় বলেন, তাঁর রাজনৈতিক যাত্রায়, এই পথে তাঁর স্বামী তাঁর জন্য বহু কিছু করেছেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা এবং তাঁর স্বামী মনীশ গুপ্তার দুটি সন্তান রয়েছে, এক মেয়ে, হর্ষিতা গুপ্তা এবং এক ছেলে নিকুঞ্জ গুপ্তা।
দিল্লি সরকার বা বিজেপির শালিমার বাগ নির্বাচনী এলাকায় তাঁর কোনও সরকারি পদ না থাকলেও, সরকারি সভায় তাঁর উপস্থিতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।
দিন কয়েক আগেই, রেখার ঘরেই জন শুনানি চলাকালীন তাঁর উপর চড়াও হন এক ব্যক্তি। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর উপর হামলার ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায় রাজধানীতে। যদিও ওই ঘটনার দিনেই রেখা সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন-
'আজ সকালে জন শুনানির সময় আমার উপর যে আক্রমণ করা হয়েছে তা কেবল আমার উপরই নয়, দিল্লির সেবা এবং জনগণের কল্যাণের জন্য আমাদের সংকল্পের উপরও কাপুরুষোচিত প্রচেষ্টা। স্বাভাবিকভাবেই, এই হামলার পর আমি হতবাক হয়েছিলাম। তবে এখন আমি ভাল আছি। আমার সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুরোধ করছি, দয়া করে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য উতলা হবেন না। খুব শীঘ্রই আমাকে আপনাদের মাঝে কাজ করতে দেখবেন। এই ধরণের আক্রমণ কখনওই আমার মনোবল এবং জনগণের সেবা করার সংকল্পকে ভেঙে দিতে পারবে না। এখন আমি আগের চেয়েও বেশি শক্তি এবং নিষ্ঠা নিয়ে আপনাদের মাঝে থাকব। জন শুনাই এবং জনসাধারণের সমস্যার সমাধান আগের মতোই গুরুত্ব এবং প্রতিশ্রুতির সঙ্গে অব্যাহত থাকবে। আপনাদের আস্থা এবং সমর্থন আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। আপনাদের অপরিসীম ভালবাসা, আশীর্বাদ এবং শুভকামনার জন্য আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।'
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ঘরে ঢুকে হামলা, থাপ্পড় খোদ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর উপর। ঠিক একদিন পরে, আক্রমণ-পরিস্থিতি কাটিয়ে পথসভা করার কথা ছিল রেখা গুপ্তার। অশান্তি-ঝামেলা সেখানেও। সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, শুক্রবার সকালে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে।