স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) নবম–দশম শ্রেণির নিয়োগের পরীক্ষা রবিবার মোটের উপর নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয়েছে। এই পরীক্ষায় প্রায় ৩ লক্ষ ১৯ হাজার পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। তার মধ্যে ভিন রাজ্য থেকে আসা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ৩১ হাজারের কাছাকাছি ভিনরাজ্যের পরীক্ষার্থী রবিবার বাংলার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। এই ৩১ হাজারের মধ্যে অনেকেই বিহার ও উত্তরপ্রদেশের মতো বিজেপিশাসিত রাজ্য থেকে এসেছেন।
রবিবার ৬৩৬টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত চলেছে পরীক্ষা। বিশেষভাবে সক্ষমদের আঘ ঘণ্টা বেশি সময় দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা দিয়ে খুশি প্রায় সব পরীক্ষার্থীই। পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে তাঁরা জানিয়েছে, প্রশ্নপত্র সহজ হয়েছে। রাজ্যের সর্বত্র পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে মিটলেও বেলঘরিয়ার ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজে সামান্য উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরীক্ষা চলাকালীন কলেজের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে গ্রেপ্তার হন শিবাশিস দাস নামের এক ব্যক্তি।
২০১৬ সালের এসএসি পরীক্ষায় বিস্তর দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। সেই কারণে গোটা প্যানেলটিই বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এর জেরে চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে সেই পরীক্ষা আবার নতুন করে নিল এসএসসি। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল, নতুন পরীক্ষায় কোনও দাগি বা অযোগ্য প্রার্থী বসতে পারবেন না। এরপর নতুন পরীক্ষায় বসতে চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন দাগিরা। কিন্তু হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের আবেদন খারিজ করে দেয়।
আদালতের নির্দেশ মেনে ১,৮০৬ জন দাগির নাম প্রকাশ করে এসএসসি। তাঁরা কেউই পরীক্ষায় বসতে পারেননি। উল্লেখ্য, আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর একাদশ–দ্বাদশে নিয়োগের পরীক্ষা হবে। এদিন পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ জন। মোট পরীক্ষাকেন্দ্র ৪৭৮। এসএসসি জানিয়েছে, ২০১৬ সালের প্যানেলে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন তাঁদের প্রায় সকলেই ফের আবেদন করেছেন। গতবারের থেকে এ বারের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অন্তত আড়াই লক্ষ বেশি। ওএমআর শিট নিয়ে কারচুপি রুখতে নতুন নিয়োগ বিধিতে একাধিক পরিবর্তন এনেছিল এসএসসি। পরীক্ষার্থীরা এই প্রথম প্রশ্নপত্রের কপি নিয়ে বাড়ি যেতে পেরেছেন।
পাশাপাশি পরীক্ষা শেষে ওএমআর শিটের কার্বন কপিও হাতে পেয়েছেন তাঁরা। তাই পরীক্ষার্থীরা মনে করছেন, এই নিয়মের কারণে স্বচ্ছতা বাড়বে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন কোনও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠার সম্ভাবনাও অনেক কমে যাবে। এছাড়াও নিয়োগ বিধি অনুযায়ী, প্যানেল ও ওয়েটিং লিস্টের মেয়াদ থাকবে নিয়োগের প্রথম কাউন্সেলিংয়ের পরে এক বছর পর্যন্ত। তবে রাজ্য সরকারের আগাম অনুমতি নিয়ে তার মেয়াদ আরও ছ’মাস বৃদ্ধি করতে পারবে কমিশন। প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে দু’বছর ওএমআর শিট সংরক্ষণ করা হবে। ওএমআর শিটের স্ক্যান করা প্রতিলিপি প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে।
এদিন কলকাতার মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে শিবপুরের একটি স্কুলের অঙ্ক শিক্ষক জানিয়েছেন, নিজের প্রাক্তন ছাত্রীদের সঙ্গে বসে তাঁকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তাঁর পাশেই তাঁর এক ছাত্রী বসেছিলেন। পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে তিনি বলেন, ‘মনে প্রচুর রাগ আছে। কিন্তু রাগ দেখাব কোথায়? এখানে বিক্ষোভ দেখালে পুলিশ তুলে নিয়ে যাবে।’