হাতে মাত্র কয়েকটা দিন, তারপরই দেবী দুর্গার গজে আগমন হবে মর্ত্যভূমে। দেবীর আরাধনায় শহর তথা গোটা রাজ্য জুড়ে সাজো সাজো রব। প্রতিবারের মত এবারও পিতৃপক্ষ অবসানের আগের দিন থেকে দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর উদ্বোধনের মধ্য দিয়েই শহরে ‘প্যান্ডেল হপিং’ শুরু হয়ে যাবে। চিরাচরিত ভঙ্গিতে ভার্চুয়াল মাধ্যমেও অগণিত জেলার পুজোর উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, গতবছর মমতার উদ্বোধন করা জেলার পুজোর সংখ্যা ছাড়িয়েছিল ৪০০-এর গন্ডি। স্বাভাবিক ভাবে, চলতি বছরে এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে। মহালয়ার আগের দিনে মুখ্যমন্ত্রীর পুজো উদ্বোধন নিয়ে প্রতিবারই বিতর্কের দানা বাধে বিরোধীরা। তাদের প্রশ্ন, পিতৃপক্ষে পুজোর উদ্বোধন কেন? যদিও এ প্রসঙ্গে গতবছরই ধর্ম সম্পর্কে তাঁর জ্ঞানের পরিচয় দিয়ে শ্রীভূমি থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ‘মহালয়ার আগে উৎসব উৎসারিত হয়, পুজো শুরু হয় না।’
প্রসঙ্গত, কলকাতা প্রায় সবকটি বড় পুজোর উদ্বোধনই মুখ্যমন্ত্রী করেন। সেই তালিকায় যেমন থাকে শ্রীভূমি, হাতিবাগান সার্বজনীন, সেলিমপুর পল্লি, বাবুবাগান, ৯৫ পল্লি, যোধপুর পার্ক, চেতলা অগ্রণী। পাশাপাশি থাকে ভবানীপুর শীতলা মন্দির, একডালিয়া এভারগ্রিন, সিংহি পার্ক, বালিগঞ্জ কালচারাল, সমাজসেবী সংঘ, হিন্দুস্থান পার্ক, শিব মন্দির, মুদিয়ালি, ৬৬ পল্লী, বাদামতলা আষাঢ় সংঘ-সহ প্রভৃতি। তাঁর এই উদ্বোধন পর্ব চলতে থাকে চতুর্থী-পঞ্চমী পর্যন্ত। প্রত্যেক মণ্ডপ উদ্বোধন করেই ক্ষান্ত হন না মুখ্যমন্ত্রী, স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে মণ্ডপ ও প্রতিমা সজ্জার খুঁটিনাটি খতিয়েও দেখেন। মুখ্যমন্ত্রীর নজরে কোনো ‘খামতি’ ধরা পড়লে, তা পুজো কমিটিকে সরাসরি জানিয়েও দেন। পাশাপাশি মণ্ডপে উপস্থিত হয়ে ঢাক বাজানো, শঙ্খ ধ্বনি দেওয়া, স্তোত্র পাঠ করা – মুখ্যমন্ত্রীর এই পুরনো অভ্যেসের সঙ্গে বাংলার মানুষ পরিচিত।
প্রসঙ্গত, রাজ্যবাসী এবার এক অন্যরকম দুর্গোৎসবের সাক্ষী থাকবে। দুর্গাপুজোর জন্য উদ্যোক্তাদের এ বছর ১ লাখ ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দিচ্ছে রাজ্য সরকার। স্বভাবতই, বাড়তি অর্থবলে বিগত বছরের খামতি সারিয়ে মণ্ডপ এবং প্রতিমা ঢেলে সাজাতে পারবেন উদ্যোক্তারা। সেই সঙ্গে পুজো কমিটিগুলিকে বিদ্যুতের মাসুলেও ৮০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। তথ্য বলছে, মমতার অনুদানের সঙ্গে লাফিয়ে বেড়েছে পুজো কমিটির সংখ্যাও। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়ে এক সামাজিক, সাংস্কৃতিক আবহ তৈরি করেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। ‘ইউনেস্কো’র খেতাব ধরে রাখতেও তৎপর তিনি। সেই সঙ্গে দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে রাজ্যের অর্থনীতিতেও আসে জোয়ার। তাই সরকারি অনুদান থেকে শুরু করে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, মহিলাদের জন্য পিঙ্ক পুলিশ, স্বাস্থ্য পরিষেবা, পরিবহন — সমস্ত ক্ষেত্রেই পুজোর সময় নজরদারি বাড়ানো হয়। এ বারও যাতে তার অন্যথা না হয়, সেই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।