মেয়ে কেন অন্তঃসত্ত্বা! জামাইয়ের ওপর খেপে লাল শ্বশুর, থানার মধ্যেই রক্তারক্তি কাণ্ড, শিউরে উঠল পুলিশ...
আজকাল | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: পরিবারের অমতে বিয়ে। আর বিয়ের পরেই অন্তঃসত্ত্বা তরুণী। পরপর এই ঘটনায় রাগে ফুঁসছিলেন তরুণীর বাবা। পারিবারিক অশান্তিও চরম পর্যায়ে পৌঁছয়। যা মিটমাট করতে অবশেষে থানায় পৌঁছন জামাই ও শ্বশুর। সেখানেই পুলিশের চোখের সামনে ঘটে গেল রক্তারক্তি কাণ্ড।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা, ঘটনাটি ঘটেছে গুজরাটের সুরাটে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আমরোলি থানায় পুলিশের সামনেই জামাইকে কুপিয়ে খুন করেন তাঁর শ্বশুর। মৃত যুবকের নাম, সাগর। পরিবারের অনুমতি না নিয়ে, তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে প্রেমিকার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি।
জানা গেছে, সাগরের স্ত্রী সম্প্রতি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। পরিবারের, বিশেষত তাঁর বাবা দেবীদাস কাধরে, মেয়েকে গর্ভপাত করার জন্য জোরাজুরি করেন। কিন্তু তাতে রাজি ছিলেন না তরুণী। যা ঘিরে পারিবারিক অশান্তিও শুরু হয়। বিষয়টি মিটমাট করতে থানায় গিয়েছিলেন সাগর ও তরুণীর বাবা দেবীদাস। পুলিশের সামনেই শ্বশুর ও জামাইয়ের তুমুল বচসা শুরু হয়।
সেই বচসা চলাকালীন হঠাৎ জামার মধ্যে থেকে ধারালো ছুরি বের করে সাগরের উপর হামলা করেন দেবীদাস। পুলিশের চোখের সামনেই জামাইকে কুপিয়ে খুন করেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, সাগরের গলায় একাধিকবার ধারালো ছুরির কোপ মারেন দেবীদাস। রক্তাক্ত অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে থানাতেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। তড়িঘড়ি করে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। হাসপাতালেই নিয়ে যাওয়ার পরেই সাগরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
থানার মধ্যে, পুলিশ আধিকারিকের সামনেই এমন ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের জেরে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনাটি ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে থানাতেই। ঘটনার পরেই দ্রুত দেবীদাসকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, পারিবারিক অশান্তির জেরে জামাইয়ের উপর শ্বশুরের হামলার ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে উত্তরপ্রদেশের পিলিভিট জেলায় আমারিয়া পুলিশ স্টেশনের অন্তর্গত বরা মাজলিয়া গ্রামে আরও একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশ জানিয়েছে, আহত যুবকের নাম মহম্মদ ইয়ামিন। শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন। যা দেখে স্থানীয়রাই জানিয়েছেন, তালিবান ঘরানায় অত্যাচার করা হয়েছে যুবককে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, মৌলানার মতো পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি ইয়ামিনের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তিনি বেল্ট দিয়ে একের পর এক আঘাত করছেন ইয়ামিনকে। বেল্ট দিয়ে মারতে মারতে ইয়ামিনকে মাটিতে ফেলে দেন। এরপর ইয়ামিনের গলায় পা দিয়ে চেপে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। দমবন্ধ হয়ে সে সময় মৃত্যুর আশঙ্কাও ছিল তাঁর। তাতেও পরোয়া করেননি অভিযুক্তরা।
ভিডিওতে দেখা গেছে, সেই মারধরের সময় আরও দু'জন যুবক ঘটনাস্থলে আসেন। যিনি মারছিলেন, তাঁর কাছ থেকে বেল্টটি চান। তাঁরাই ইয়ামিনকে বেল্ট দিয়ে মারধর করবেন বলে জানান। তবে বেল্ট অন্য কারও হাতে তুলে দেননি ওই যুবক। আরও দুই যুবক এসে ইয়ামিনকে একের পর এক চড়, লাথি, ঘুষি, থাপ্পড় মারতে থাকেন।
বেধড়ক মার খেতে খেতে প্রাণপণে চিৎকার করতে থাকেন ইয়ামিন। বারবার তাঁদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চান। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন তিনি। তবুও কমেনি অত্যাচার। ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই, নির্যাতনের নমুনা দেখে শিউরে উঠেছেন নেটিজেনরা।
তদন্তে নেমে জানা গেছে, যিনি বেল্ট দিয়ে, গলায় পা চেপে অত্যাচার করেছিলেন, তিনি সম্পর্কে ইয়ামিনের শ্বশুর। বাকি দু'জন ইয়ামিনের শ্বশুরবাড়ির আরও দু'জন সদস্য। জানা গেছে, ইয়ামিন মাদকাসক্ত ছিলেন। নিত্যদিন মাদকের নেশা করাকে কেন্দ্র করে স্ত্রীর সঙ্গে ঝামেলা হত তাঁর।
সংসারে অশান্তির বিষয়টি বাড়িতে জানিয়েছিলেন ইয়ামিনের স্ত্রী। এও জানিয়েছিলেন, আপত্তি থাকা সত্ত্বেও ইয়ামিন মাদকের নেশা ছাড়ছেন না। এই অভিযোগের পরে ইয়ামিনকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেছিলেন শ্বশুর। খাওয়াদাওয়ার নিমন্ত্রণ পেয়ে আনন্দে লাফাতে লাফাতে শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন ইয়ামিন। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে পা রাখা মাত্রই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হল তাঁকে।
ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করেছে। অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করেছে তারা। যদি ইয়ামিনের তরফে থানায় কোনও অভিযোগ করা হয়নি। পুলিশ তাই গ্রেপ্তার করেনি। কিন্তু ঘটনাটি ঘিরে তদন্ত জারি রেখেছে তারা।