আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুম্বই হাসপাতালে আবারও এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা৷ ৮৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা, ইন্দুমতি চাভান। তিনি মুম্বইয়ের জুহুর ডঃ আর. এন. কুপার মিউনিসিপ্যাল জেনারেল হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। খবর অনুযায়ী, তাঁকে বুধবার গভীর রাতে একটি ইঁদুর কামড়ে দেয় বলে অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ইন্দুমতি চাভান মারোল এলাকার বাসিন্দা। তিনি ডিমেনশিয়া ও একটি গুরুতর বুকে সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে৷ এহেন ঘটনায় শহরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম সূত্র অনুসারে খবর পাওয়া গিয়েছে, চাভানকে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) আইসিইউ থেকে ছয়তলার জেনারেল ওয়ার্ডে স্থান পরিবর্তন করা হয়েছিল। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর নাতি লক্ষ্য করেন যে, তাঁর বাম হাতে একটি কামড়ের দাগ রয়েছে।
চাভানের জামাতা বলেন, পরিবারের সদস্যরা গভীরভাবে মর্মাহত হন যখন তাঁরা প্রৌঢ়ার হাতে কামড়ের দাগ দেখেন। তিনি আরও জানান যে, পরিবার প্রথমে হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়। চাভানের জামাতার দাবি, পরের রাতেই ওই একই ওয়ার্ডে আরও এক প্রবীণ রোগীকে ইঁদুর কামড়েছে।
চাভানের আহত হাতে ইঁদুরের কামড়ের ছবি শুক্রবার সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেটপাড়ায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিএমসি-র মেডিক্যাল এডুকেশন ডিরেক্টর ডাঃ নীলম আন্দ্রাদে সংবাদমাধ্যমে জানান, তিনি একাধিক কামড়ের কোনও অফিসিয়াল রিপোর্ট পাননি। পাশাপাশি তিনি একথাও স্বীকার করেন যে হাসপাতালে ইঁদুরের সমস্যা সম্পর্কে আগেই সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল।
ঘটনার পরেই বিএমসি-র কে-ওয়েস্ট ওয়ার্ডের পেস্ট কন্ট্রোল আধিকারিকদের হাসপাতালে মোতায়েন করা হয় এবং সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, চাভানকে আগের শনিবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল গুরুতর শ্বাসকষ্ট ও বুকে সংক্রমণের কারণে। তবে তথ্য অনুযায়ী, বিএমসি পরিচালিত বিভিন্ন হাসপাতালে ইঁদুরের কামড়ের ঘটনা নতুন কিছু নয়। এই হাসপাতালগুলির হাউসকিপিং ও পেস্ট কন্ট্রোলের দায়িত্ব একটি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে মধ্যপ্রদেশেও একইরকম চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি ইন্দোরের একটি সরকারি হাসপাতালে ঘটে। খবর অনুযায়ী, দুই নবজাতককে ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (ICU) ভেতরে ইঁদুরে কামড় দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা সামনে আসার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়। আক্রান্ত দুই নবজাতকের সদ্য জন্মের পরই এই ঘটনা। তারা ইন্দোরের মহারাজা যশবন্তরাও চিকিৎসালয় (MYH)-এর নিওনেটাল ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (NICU) ভর্তি ছিল। এটি রাজ্যের অন্যতম বৃহৎ সরকারি হাসপাতাল।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালের নার্সিং টিম প্রথমে নবজাতকদের শরীরে বিভিন্ন ক্ষত দেখতে পায়৷ এমন দৃশ্য দেখার পর সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল প্রশাসনকে বিষয়টি জানান হয়। পরে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নবজাতকদের পাশে থাকা একটি দোলনায় কিছু ইঁদুর লাফালাফি করছে। খবর অনুযায়ী প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার। আর ঠিক তার পরদিন সোমবার আরও একটি অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে।
ঘটনার জেরে হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ড. অশোক যাদব স্বীকার করেছেন যে, হাসপাতালে সর্বশেষ পেস্ট কন্ট্রোল করা হয়েছিল পাঁচ বছর আগে। তিনি বলেন, 'গত ৪৮ ঘণ্টায় আইসিইউ-তে এক নবজাতকের আঙুলে ইঁদুরে কামড়েছে। অন্য এক শিশুর মাথা এবং কাঁধে কামড়ের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। শিশুরা এখন সুরক্ষিত এবং তাদের নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসা চলছে। আমরা খুব শিগগিরই পুরো হাসপাতালে বড় ধরনের পেস্ট কন্ট্রোল অভিযান চালাব। রোগীর আত্মীয়দেরও অনুরোধ করা হয়েছে যাতে তাঁরা ওয়ার্ডে খাবার না আনেন, কারণ এটি ইঁদুরকে আকর্ষণ করে।'
হাসপাতালের আরেক সিনিয়র চিকিৎসক ড. ব্রজেশ লাহোটি এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেন, 'হাসপাতালে ইঁদুরের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। কর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লোহার জাল বসানো হচ্ছে, এবং বড় পরিসরে পেস্ট কন্ট্রোলের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।'