• কলকাতার বাড়ি বিপর্যয় শুধুই কি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, না কি নাগরিক সমাজের সচেতনতার অভাব?...
    আজকাল | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: শহর কলকাতায় প্রাচীন বাড়ির সংখ্যা বর্তমানে নেহাত কম নয়, আর সেই বাড়িগুলি অধিকাংশই উত্তর ও মধ্য কলকাতা এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেই বাড়িগুলির কোনওটির বয়স ১৫০ বা কোনওটির ২০০, কিছু কিছু আছে ২৫০ বছর বা তার অধিক। সেই বাড়িগুলিতে কলকাতা পুরসভা থেকে বিপজ্জনক বাড়ির নোটিশ বোর্ড পর্যন্ত টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে নাগরিক সচেতনতার জন্য। কেউ কেউ পুরনো বাড়িকে পুনর্নির্মাণ বা মেরামতের মাধ্যমে সুস্থ রাখার চেষ্টা করছেন। তবে অধিকাংশই কলকাতা পুরসভার এই নোটিশ বোর্ডকে বা সচেতনতার বাণীকে তেমন ভাবে আমল দিচ্ছেন না। আর তার ফলস্বরূপ এবার অধিক পর্যায়ে বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শহর কলকাতার এই উত্তর ভাগের প্রাচীন বাড়িগুলি অনেক ক্ষেত্রেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে। আর এই বাড়িগুলি ধসে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বহু প্রাণহানির ঘটনাও প্রকাশ্যে এসেছে। রেহাই পায়নি বাড়ির শিশু এবং মহিলারাও। কারণ প্রকৃতি তার নিয়মে চলে, আর প্রাচীনতম বাড়ি কাউকেই দেখে বা নিয়ম মেনে ভেঙে পড়ে না। কোথায় শিশু বা মহিলা রয়েছেন বা কোথায় মানুষের বসবাস রয়েছে সে অংশ ভেঙে পড়বে না সেটা কোনও দিন সম্ভব নয়। আর এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় কারণে শহর কলকাতায় একের পর এক বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনায় আতঙ্ক নেহাত কম ছড়ায়নি। 

    এই বছর বর্ষায় শোভাবাজার, হাতিবাগান, এন্টালি, মানিকতলা-সহ একাধিক জায়গায় প্রাচীন বাড়িগুলি তাসের ঘরের মতো কোথাও রাস্তার উপরে, আবার কোথাও বাড়ির অন্দরে ঝুরঝুর করে ভেঙে পরে, ঘটে প্রাণহানি। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের তৎপরতাও ছিল যথেষ্ট। প্রতিটি দুর্ঘটনাপূর্ণ এলাকায় এবং একই সঙ্গে কলকাতা পুরসভার কর্মকর্তা-সহ দমকল বাহিনী ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী তৎপরতার সঙ্গে কাজ করেছে। কোথাও বাসিন্দাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, আবার কোথাও অনেক ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হয়নি ভয়াবহতার পরিমাণ বেশি থাকার কারণে। পুরসভার তরফ থেকে নোটিশ দিয়ে বহু বার জানানো হয়েছে যে তারা সঠিকভাবে যেন ব্যবস্থা নেন তাদের বাড়ির নিরাপত্তা সুরক্ষা করতে এবং মেরামতের ব্যবস্থা করতে। নির্মাণ বিভাগের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই বাড়িগুলি মূলত ব্রিটিশ আমলে অথবা তারও আগে আড়াইশো বা তিনশো বছর আগে চুন সুরকি দিয়ে বানানো। যেগুলি বিজ্ঞানসম্মত ভাবে সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করে তৈরি হয়নি। আর যার কারণেই অতি ভারি বর্ষণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হয়ে পড়েছে দুর্বল এবং সঙ্গে সঙ্গে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ছে। 

    কলকাতা কর্পোরেশন সূত্রে খবর, পুরনো বাড়ি ভাঙা পড়া রোধ করতে এ বার বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পুরনো বাড়ি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বা সঠিক বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে তৈরি না হওয়ার কারণে ভেঙে প্রাণহানি যাতে না ঘটে তার জন্য ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে মিটিং করা হয়েছে একাধিক পর্যায়। খুব শীঘ্রই একটি দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যাতে আগামীতে এ ধরনের ঘটনা বার বার না ঘটে এবং নাগরিক সমাজ বিপর্যয়ের মুখে না পরে।
  • Link to this news (আজকাল)