বাবুল হক, মালদহ: ভর্তির ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে সোচ্চার মালদহের গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দিনভর চলল তুমুল বিক্ষোভ, উত্তেজনা। বিক্ষোভকারীদের সরাতে বহিরাগতরা চড়াও হয়েছিলেন বলেও অভিযোগ। ধাক্কাধাক্কি, বিক্ষোভে কয়েকজন পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন বলেও খবর। বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের একাংশ ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। ফলে যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে অবরোধ তোলার চেষ্টা করে।
বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্বাভাবিক হারে ভর্তির ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে কলা বিভাগে ভর্তির ফি ছিল ২৩০০ টাকা। চলতি বছর সেই ফি বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৮২০ টাকা। বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির ফি ৩৭২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৮২০ টাকা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত বহু পরিবারের পড়ুয়ারা পড়াশোনা করেন। এই পরিমাণ ফি বাড়ানো হলে সেসব পরিবারগুলি আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়বে বলে দাবি। এই বিষয়ে গত কয়েকদিন ধরেই ক্ষোভ বাড়ছিল পড়ুয়াদের মধ্যে। আজ, সোমবার সেই বিক্ষোভ ব্যাপক আকার নিল। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে চলল বিক্ষোভ, অশান্তি।
ফি বৃদ্ধি নিয়ে পড়ুয়াদের আপত্তি থাকায় জুন মাস থেকে দ্বিতীয় সেমেস্টারে ভর্তি স্থগিত রেখেছিল কর্তৃপক্ষ। উপাচার্যের নির্দেশেই ভর্তি বন্ধ ছিল। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে হঠাৎ করে উপাচার্য পদ থেকে পবিত্র চট্টোপাধ্যায়কে অপসারণ করেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। এর জেরেই দ্বিতীয় সেমেস্টারের ফি কমানোর ব্যাপারে আর কোনও চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পড়ুয়াদের দাবি মেনে ফি কমানো সম্ভব কি না, সেই বিষয়ে উপাচার্য ছাড়াই রেজিস্ট্রারের তত্ত্বাবধানে একটি বৈঠক হয়। কিন্তু তাতে কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি বলে খবর। চলতি বছরের ১৩ জুন দ্বিতীয় সেমেস্টারে ভর্তির ফি হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারপর এই ফি কমানোর দাবিতে পড়ুয়ারা আন্দোলনে নামলে স্থগিত করে দেওয়া হয় ভর্তি প্রক্রিয়া। এখনও ফি কমিয়ে ভর্তি নেওয়া শুরু হয়নি। কবে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হবে, কবে পঠনপাঠন শুরু হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর মধ্যেই ২৭ আগস্ট উপাচার্য পবিত্র চট্টোপাধ্যায়কে অপসারণ করেন আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ফলে স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তি নিয়ে জট খোলার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এদিন আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে কার্যত উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট আটকে তুমুল বিক্ষোভ চলে। বিক্ষোভকারীদের একাংশের উপর বহিরাগতরা চড়াও হয় বলেও অভিযোগ। ধাক্কাধাক্কিতে একাধিক পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে খবর। তাঁদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। পরে বিক্ষোভকারীরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। পড়ুয়াদের অভিযোগ, আন্দোলন শুরু হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিভিন্নভাবে ভয় দেখাচ্ছে। ‘থ্রেট কালচারে’র বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছেন একাংশ। এই বিষয়ে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ডিন সাধনকুমার সাহা জানিয়েছেন, ভর্তি ফি বৃদ্ধির কারণে কিছু ছাত্রছাত্রী নিশ্চিতভাবে সমস্যায় পড়েছেন। তাই ছাত্রছাত্রীদের এই দাবির সঙ্গে তিনি সহমত। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের থ্রেট কালচারের অভিযোগ তিনি মানতে নারাজ।