সব পুজো মণ্ডপে মোদির ছবি রাখতেই হবে, ‘ফরমান’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখার
বর্তমান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: গত ফেব্রুয়ারিতেই দিল্লিতে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। আর রাজধানীর দুর্গাপুজোয় জারি হল সরকারি ‘ফরমান’— সব পুজো মণ্ডপে রাখতেই হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি! তাও আবার যে কোনও জায়গায় তা রাখলে হবে না। হয় দেবী দুর্গার পাশে, নয় প্রতিমার পায়ের কাছে! অর্থাৎ, দিল্লিতে এবার দুর্গাপুজো কার্যত মোদিময় হতে চলেছে, এমনই জল্পনা এখন তুঙ্গে। গত শনিবারই শহরের শ’খানেক পুজো কমিটির সদস্যদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা। সেখানে প্রথমে পুজো মণ্ডপগুলির জন্য বিদ্যুতের মাশুলে ছাড়ের ঘোষণা করা হয়। তারপরই মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং জারি করেন দেবীর পায়ের কাছে মোদির ছবি রাখার ওই আজব ‘ফরমান’!
সূত্রের খবর, শনিবারের বৈঠকে উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা বলেন, ‘সামনেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজির জন্মদিন। ১৫ দিনব্যাপী জন্মদিন পালন করা হবে। এই পর্বেই আপনারা দুর্গাপুজো করছেন। সম্ভব হলে পুজো মণ্ডপে মোদিজির ছবি রাখুন। প্রতিমার পাশে রাখুন, কিংবা প্রতিমার পায়ের কাছে রাখুন। যার যেমন সম্ভব হবে, সেভাবেই পদক্ষেপ করুন।’ দিল্লির বিজেপি সরকারের এহেন ‘নির্দেশিকা’য় তীব্র অস্বস্তিতে পড়েছেন পুজো আয়োজকদের একটি বড় অংশ। সাম্প্রতিক সময়ে দুর্গাপুজো কিংবা কালীপুজো-দীপাবলির উৎসবে রাজনীতির ছোঁয়া কিছুটা হলেও থাকে। উৎসবগুলিকে জনসংযোগের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন রাজনীতির কারবারিরা। কিন্তু এভাবে সরাসরি পুজো মণ্ডপে প্রধানমন্ত্রী কিংবা মুখ্যমন্ত্রীর ছবি রাখার ফরমান জারির উদাহরণ বাংলায় নেই। দেশের অন্যত্রও তা সেভাবে দেখা যায় না। নিজেদের ‘বাঙালির পার্টি’ হিসেবে প্রমাণে মরিয়া বিজেপি আদতে বাঙালিয়ানায় নতুন অধ্যায় যোগ করতে চাইছে কি না, সেই প্রশ্নই তুলছেন উদ্যোক্তাদের অনেকে। একইসঙ্গে চর্চা শুরু হয়েছে, তাহলে কি এবার শর্তসাপেক্ষে পুজোর অনুমোদন দেবে দিল্লির বিজেপি সরকার? অর্থাৎ, মোদির ছবি থাকলে তবেই পুজো, নাহলে নয়! আপাতত এব্যাপারে দিল্লি সরকারের ‘লিখিত’ নির্দেশিকার অপেক্ষায় পুজো কমিটিগুলি। সাম্প্রতিক বাংলা ও বাংলাভাষী বিতর্কে এহেন ‘ছবি সংস্কৃতি’ নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে বলেই অনুমান সংশ্লিষ্ট মহলের। যদিও এপ্রসঙ্গে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে নারাজ পুজো উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশই। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন, যাঁরা শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, জানিয়েছেন, ‘বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে এই বিষয় রাখাই হয়নি। এজেন্ডায় ছিল পুজোর অনুমোদন, বিসর্জনের প্রস্তুতি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক ইস্যু। আলোচনা চলাকালীনই মুখ্যমন্ত্রী খানিকটা আচমকাই নরেন্দ্র মোদির ছবি রাখার বিষয় টেনে আনেন।’ যদিও এটির বাস্তবায়ন সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন আয়োজকরা।
মণ্ডপে মোদির ছবি রাখার বিষয়ের উল্লেখ না করলেও সোমবার দিল্লিতে বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিজেপি বাংলাবিরোধী নয়। দিল্লির বিজেপি সরকার দুর্গাপুজো আয়োজনে একাধিক পদক্ষেপ করেছে।’ পাল্টা প্রতিবাদে সুর চড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘এ তো অদ্ভুত নিদান! বাংলাভাষীদের বিভ্রান্ত করতে আর কত কিছু করবেন?’