• এসআইআরে মান্যতা আধারকেও, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
    বর্তমান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: শীর্ষ আদালত বিবেচনার ‘পরামর্শ’ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে। তা সত্ত্বেও বিহারে স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশনে (এসআইআর) গ্রহণ করা হচ্ছিল না আধার কার্ড। এমনকী আধারের মাধ্যমে জমা দেওয়া আবেদনপত্র বাতিলের খবর শোনা যাচ্ছিল। সুপ্রিম কোর্টের সামনে সোমবার এই তথ্য পেশ হতেই নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হল ‘নির্দেশ’— বিহারে ভোটার তালিকায় নাম তোলা বা বাতিলের জন্য আধার কার্ডকে প্রামাণ্য নথি হিসেবেই গ্রহণ করতে হবে। বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চের সাফ মন্তব্য, আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ নয় ঠিকই। তবে এটি অবশ্যই সরকার স্বীকৃত পরিচয়পত্র। তাই আধারও গ্রাহ্য হবে এসআইআরে। এসআইআরের ইনিউমারেশন ফর্ম ফিলাপের ক্ষেত্রে ১১টি নথিকে স্বীকৃতি দিয়েছে কমিশন। তাতে আধার কার্ড ছিল না। এবার ১২তম নথি হিসেবে সেই তালিকায় যুক্ত হবে আধার। এব্যাপারে কমিশন শীঘ্রই নির্দেশিকা জারি করবে। 

    এদিনের শুনানিতে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী বারবার বলেন, ‘আমরা আধার কার্ড নিচ্ছি। ইনিউমারেশন ফর্মেই তা রয়েছে। ফলে অহেতুক অভিযোগ করা হচ্ছে।’ তা শুনেই বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর মন্তব্য, ‘ইনিউমারেশন ফর্মে স্রেফ আধার নাম্বারটা নিচ্ছেন। আধার কার্ডকে প্রামাণ্য নথি হিসেবে গ্রহণ করছেন না। কমিশনের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে গ্রহণযোগ্য ১১ নথির তালিকায় তো এটি নেই। আধার নাগরিকত্বের প্রমাণ নয় ঠিকই। কিন্তু সরকার স্বীকৃত পরিচয়পত্র তো বটেই। সেই হিসেবে আপনাদের তালিকায় নাগরিকত্বের নথি হিসেবে পাসপোর্ট আর বার্থ সার্টিফিকেট ছাড়া তো কিছুই নেই। তাহলে বাকিগুলি কেন নিচ্ছেন?’ তখন আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, ‘আমাদের দাবি একটাই। আধার কার্ড গ্রহণের নির্দেশিকা জারি। সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শের পরেও বুথ লেভেল অফিসাররা (বিএলও) আধার সহ আবেদনপত্র বাতিল করে দিচ্ছেন। বলা হচ্ছে, এব্যাপারে কোনও নির্দেশিকা তাদের কাছে নেই।’ পাল্টা রাকেশ দ্বিবেদীর দাবি, ‘আমরা তো কাগজে, টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়েছি। ব্যাপক হারে প্রচারও করেছি।’ পাল্টা সিবালের যুক্তি, ‘কিন্তু কোনও আনুষ্ঠানিক নির্দেশিকা জারি হয়নি। আমরা সেটাই চাইছি। কেউই দাবি করছি না, আধার নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র।’ সওয়াল-জবাব শুনে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, ‘বিহারে এআইআরে এবার থেকে আধার কার্ড গ্রহণ হবে। তবে কার্ড আসল কি না খতিয়ে দেখবে কমিশন।’ আগামী সোমবার এই মামলার ফের শুনানি হবে। 

    সুপ্রিম কোর্টের এদিনের নির্দেশে খুশি মামলার মূল আবেদনকারী অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্ম (এডিআর)। পাশাপাশি তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, ডেরেক ও’ব্রায়েন, কংগ্রেসের কে সি বেণুগোপালদের মতো ১৮ জন আবেদনকারী আশার আলো দেখছেন। মহুয়া ‘এক্স’ হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এবার ভোট চুরি এবং ব্যাপক হারে ভোটারদের ভোট দেওয়া থেকে আটকানো অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। সত্যমেব জয়তে!’ কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশের মন্তব্য, ‘শীর্ষ আদালতের এদিনের নির্দেশের পরে নির্বাচন কমিশনের লজ্জা হওয়া উচিত। লাগাতার চেষ্টা চলছে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার।’ তৃণমূলের স্পষ্ট বক্তব্য, জনস্বার্থ মামলায় মুখ পুড়ল জনবিরোধী কেন্দ্রীয় সরকারের। বিহারে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করতে চাইছিল বিজেপি সরকার। আদালতের নির্দেশ প্রমাণ করল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আমাদের লড়াই ঠিক পথে ছিল, আছে এবং থাকবে।
  • Link to this news (বর্তমান)