জমিদারবাড়ির কামানের আওয়াজে বসত ঘট উদগ্রামে পুজোয় এখনও বলি দেওয়া হয় সাদা পাঁঠা
বর্তমান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মৃন্ময় বসাক, কালিয়াগঞ্জ: সময় বদলেছে। উত্তর দিনাজপুরের জমিদারবাড়ি আর কালিয়াগঞ্জের উদগ্রামের মাঝে এখন কাঁটাতার। কিন্তু সীমান্তঘেঁষা কালিয়াগঞ্জ ব্লকের উদগ্রামের দুর্গাপুজো এখনও ধুমধাম করে হয়। কবে থেকে এই পুজো হয়, তা ঠিক করে বলতে পারেন না এখানকার প্রবীণরাও। তবে অনেকের মতে, উদগ্রামে চারশো বছর ধরে দেবীর আরাধনা করেন স্থানীয়রা। অবিভক্ত দিনাজপুরের রাজবাড়িতে কামান দাগার শব্দ শুনে দুর্গাপুজোর ঘট বসত কালিয়াগঞ্জের উদগ্রামে। সীমান্তের কাঁটাতারও এই পুজোর জৌলুস কমাতে পারেনি। আজও নিষ্ঠা সহকারে গ্রামের বাসিন্দারা পুজোর আয়োজন করেন।
পুজো কমিটির সম্পাদক সত্যম সরকার জানান, এই পুজো বহু পুরনো। প্রায় ৪০০ বছর ধরে পুজো হয়ে আসছে। বাংলাদেশের দিনাজপুরের রাজবাড়িতে কামানের আওয়াজ শুনে এখানে দেবীর পুজোর ঘট বসত। এখন জমিদারিও নেই। কামানেরও আওয়াজ আসে না। তবে উদগ্রামে এখন ষষ্ঠিতে ঘট বসে।
গ্রামের মানুষ নিরামিষ খেয়ে পুজোর আয়োজন করেন। পুজোর কয়েকটা দিন মুখোশ নাচ, চণ্ডীমঙ্গল পালাগানের আসর বসে। পুজোয় দেবীকে এখনও সাদা পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। আগে খড়ের চালা দেওয়া মন্দির ছিল দেবীর। এখন তা পাকা।
পুজো কমিটির সভাপতি জীবন সরকারের কথায়,পুজোর পর স্থায়ী পাকা মন্দিরে সারাবছর দেবী প্রতিমা থাকে। পুজো হয়। জন্মাষ্টমীর পর প্রতিমা স্থানীয় পুকুরে বিসর্জন দিয়ে সেই কাঠামোতে ফের মায়ের মৃণ্ময়ী রূপ দেওয়া হয়। পুজোর দিনগুলিতে ভক্তের ঢল নামে। পুরনো নিয়ম রীতি মেনেই পুজো হয়।
এখনও মায়ের মন্দিরে আশীর্বাদ নিয়ে বাড়ির শুভ কাজ, অনুষ্ঠান করেন উদগ্রামের মানুষ। গ্রামের বাসিন্দা পরিতোষ দাসের কথায়, দেবী আমাদের অভিভাবকের মতো। বিয়ের অনুষ্ঠান হলে গ্রামের কোনও বাড়িতেই ছাঁদনাতলা হয় না। মায়ের মন্দিরের সামনে ছাঁদনাতলা তৈরি করে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। মন্দিরে পুজো না দিয়ে বাড়িতে কোনও শুভ কাজ করেন না কেউ। দেশভাগের আগে দুই বাংলার মানুষ এই পুজোয় শামিল হতো। এখন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভক্তরা আসেন। পুজোর আগে উদগ্রামে পুজোমণ্ডপ সাজানোর কাজ জোরকদমে চলছে। ফাইল চিত্র