• কোচবিহারে বড়দেবীর গুপ্তপুজোয় আজও প্রয়োজন হয় নর-রক্ত
    বর্তমান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায় , কোচবিহার:

    গভীর রাতে বড়দেবীর গুপ্তপুজো। আজও সে পুজোয় দেবীকে দিতে হয় নর-রক্ত। রাজার শহর কোচবিহারে বড়দেবীর পুজোয় একসময় নরবলি দেওয়ার প্রথা ছিল। সে প্রথা বিলুপ্ত বহুকাল আগেই। কিন্তু দেবীর গুপ্তপুজোয় আজও উৎসর্গ করতে হয় মানুষের রক্ত। কোচবিহারের কালজানি এলাকার এক পরিবারের সদস্যরা বংশ পরম্পরায় নিজেদের শরীরের রক্ত উৎসর্গ করেন বড়দেবীর সামনে। রাজ আমল থেকে এই প্রথা চলে আসছে।মহাষ্টমীর গভীর রাতে গুপ্তপুজো চলাকালীন গর্ভগৃহে কারও থাকার অনুমতি নেই। বড়দেবীর পুজোর পুরোহিত মূর্তির সামনে থাকেন। আর যিনি রক্ত উৎসর্গ করেন তিনি মন্দিরের ভিতরের আর একটি ঘরে পুজো করেন। রক্ত দান করলেই হয় না পুজোয় বসার আগে কয়েকটি নিয়ম কঠোরভাবে পালন করতে হয় উৎসর্গকারীকে। তারপর পুজো সম্পন্ন হয়। 

    গত বছর দেবীকে রক্ত উৎসর্গ করেছিলেন শৈলেন্দ্রনাথ রায়। তাঁর আগে এই কাজ দীর্ঘদিন ধরে করেছেন তাঁর দাদা শিবেন্দ্রনাথ রায়। তার আগে তাঁর দাদা সুরেন্দ্রনাথ রায়, তাঁদের বাবা ভবেন্দ্রনাথ রায়, এইভাবে বংশ পরম্পরায় চলছে উৎসর্গের পরম্পরা। শৈলেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘বড়দেবীর পুজোয় আমাদের বিশেষ ভূমিকা থাকে গুপ্তপুজোকে কেন্দ্র করে। রাধা অষ্টমীর দিন আমাদের চাঁদোয়া টাঙাতে হয়। ষষ্ঠীর দিন যজ্ঞকুণ্ড বানাতে হয়। গুপ্তপুজোয় শরীর থেকে রক্ত উৎসর্গ করতে হয়। বংশ পরম্পরায় এ কাজ করে আসছি আমরা। গুপ্তপুজোর সময় গুপ্তঘরে যিনি রক্ত উৎসর্গ করেন তিনি ছাড়া অন্য কেউ সেখানে থাকেন না।’ কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরের কর্মী জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘শৈলেন্দ্রনাথ রায়কে এবারও গুপ্তপুজোর জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হবে। দু-চারদিনের মধ্যে পৌঁছবে চিঠি।’ মন্দির কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, গুপ্তপুজোর সময় ডান হাতের আঙুল থেকে রক্ত উৎসর্গ করার নিয়ম। ওই দিন উপবাস করতে হয় উৎসর্গকারীকে। গভীর রাতে পুজো শুরু। সেই পুজোয় আরও অনেক রকমের নিয়মকানুন আছে। সবই গুপ্তপুজোর অঙ্গ। তাই প্রকাশ্যে বলা নিষেধ। বড়দেবীর প্রতি পরম শ্রদ্ধায় আজও প্রাচীন সেই গুপ্তপুজো হয়ে চলেছে রীতি কঠোরভাবে মেনে।  বড়দেবীর মন্দির।-ফাইল চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)