‘অসাধ্যসাধনে’ শিশুর হুক গাঁথা চোখের দৃষ্টিশক্তি রক্ষা
বর্তমান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, মালদহ: কার্যত অসাধ্যসাধন! যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চিকিত্সা করে এক শিশুর দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করলেন মালদহ মেডিক্যালের চিকিৎসকরা। সোমবার মালদহ মেডিক্যালে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে চলা এক কঠিন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রক্ষা পেয়েছে ৪ বছর ১০ মাস বয়সী এক শিশুর দৃষ্টিশক্তি। ডা: সোমনাথ চৌধুরী এবং ডা: অরিন্দম দাসের এই চেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন শিশুর অভিভবকরা। মালদহ মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের দাবি, পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা নিয়মিত এভাবেই যত্ন নিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে শিশুর চোখের কর্ণিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। হুকটি যেভাবে গেঁথেছিল, তাতে রেটিনা নষ্ট হওয়ার প্রবল আশঙ্কা ছিল।
মালদহ মেডিক্যালের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ সোমনাথ জানান, যে শিশুর চোখে ওই অস্ত্রোপচার করা হয়, সেই আয়ুষ সাহা রতুয়া-২ ব্লকের পুখুরিয়া অঞ্চলের কোকলামারির বাসিন্দা। রবিবার বাড়িতে বসে রিমোট কন্ট্রোল চালিত গাড়ি চালাচ্ছিল ওই শিশুটি। দুর্ঘটনা ঘটে যায় তখনই। রিমোটের উপরের দিকে থাকা একটি হুকের মতো ধাতব অংশ ঢুকে যায় আয়ুষের বাঁ চোখে। দ্রুত তাকে মালদহ মেডিক্যালে নিয়ে আসেন অভিভাবকরা। সোমবার জরুরি ভিত্তিতে শিশুর চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়। নির্বিঘ্নে ওই হুকের মতো ধাতব অংশটি বের করা সম্ভব হয়েছে। এই ধরণের অস্ত্রোপচার বিরল না হলেও অত্যন্ত জটিল। সঠিক সময়ে অস্ত্রোপচার না করা হলে ওই শিশু এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলত।
এই অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া অপর চিকিৎসক জটিল রোগ বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বলেন, এরকম অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে প্রায় পুরোটাই অপরিকল্পিত থাকে। জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনা করে তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এই অস্ত্রোপচার বেশ জটিল ছিল। শিশুটির দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করা গিয়েছে, এতে আমরা ভীষণ খুশি।
শিশুর অভিভাবক বলেন, ঘটনার পর দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। মালদহ মেডিক্যালের চিকিৎসকরা যে দ্রুততার সঙ্গে ছেলের চোখ বাঁচিয়েছেন, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।
মালদহ মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ডাঃ পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, আমাদের চিকিৎসকরা অত্যন্ত দায়িত্বশীল এবং দক্ষ। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে জটিল বিভিন্ন রোগ ও দুর্ঘটনাজনিত আঘাতের সমাধান করেছেন। এদিন আরও এক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন আমাদের দুই চিকিৎসক, জুনিয়র চিকিৎসক এবং নার্সরা।