• থিম কেড়েছিল পেটের ভাত, সেই থিমেই পুনর্জন্ম সিনারির, খুশি কাটোয়ার শিল্পীরা
    বর্তমান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: নব্বইয়ের দশকের শেষের দিক। দক্ষিণ কলকাতার বোসপুকুর শীতলা মন্দির পুজো কমিটি গোটা বাংলাকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। সম্ভবত সেই প্রথম বাংলার মানুষ জানতে পারল, চা খাওয়ার মাটির ভাঁড় দিয়েও পুজোর মণ্ডপ হয়। বাকিটা ইতিহাস। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে ঢুকে পড়ল ‘থিম’। নিমেষেই উবে গেল সিনারি আঁকা কাপড়ের মণ্ডপ। রাতারাতি একরকম বেকার হয়ে গেলেন রাজ্যের সিনারি শিল্পীরা। অনেকে ভিন্ন পেশায় চলে গেলেন। কিছু শিল্পী থিমের সঙ্গে কোনওরকমে খাপখাইয়ে থেকে গেলেন। কালের প্রবাহে ফের বদলাতে শুরু করেছে থিম ভাবনা। থিমের মণ্ডপে ঠাঁই পাচ্ছে সিনারি। তার জেরে কাটোয়া মহকুমার সিনারি শিল্পীদের মুখে ফের হাসি ফুটেছে।

    নব্বইয়ের দশকে পুজো মণ্ডপে চিত্রশিল্পীদের রং-তুলির ক্যানভাসে ম্যাজিক সৃষ্টি হতো। নানা সাম্প্রতিক ঘটনাকে তাঁরা তুলে ধরতেন। সেগুলি দর্শনার্থীদের নজর কাড়ত। কিন্তু হঠাৎ একসময় সেসব উধাও হয়ে যায়। থিম ভাবনাকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় বহু সিনারি শিল্পী বেকার হয়ে যান। তবে এখন থিম ভাবনাতেও বদল ঘটেছে। থিমের মণ্ডপে আঁকা হচ্ছে নানা কারুকার্য। স্বাভাবিকভাবেই ফের কদর বাড়ছে সিনারি শিল্পীদের।

    কাটোয়ার দাঁইহাট শহরের দেওয়ানগঞ্জের চয়ন হাওলাদার ৩০বছরের বেশি সময় ধরে সিনারি আঁকতেন। বর্তমানে তিনি থিমের মণ্ডপ গড়ছেন। তিনি বলেন, একসময় সিনারি হারিয়ে যাওয়ায় আমরা বেকার হয়ে যাই। এখন সময় বদলেছে। আমরা থিমের মণ্ডপ সাজানোর কাজ পাচ্ছি। পূর্বস্থলীর পারুলিয়ায় একটি পুজো মণ্ডপের থিম ‘কাঠপুতুলের দেশে’। চয়নবাবু সেখানে প্লাইউডের উপর রং-তুলি দিয়ে পুতুল আঁকছেন। সেগুলি দিয়েই পুজো মণ্ডপ সেজে উঠবে। তিনি আরও বলেন, আমি রায়গঞ্জেও বরাত পেয়েছি। সেখানে বাল্যবিবাহের থিম গড়ছে। আমার কাজ, থিম শিল্পীর দেওয়া নানা কার্টুন এঁকে দেওয়া। সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকার বরাত পেয়েছি।

    কাটোয়া শহরের সিনারি শিল্পী মোহন ঘোষও এবার রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক টাকার বরাত পেয়েছেন। কোথাও বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী দিয়ে পুজো মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে। আবার কোথাও ঝুড়ি দিয়ে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে থিমের মণ্ডপ। মোহনবাবু পৌরাণিক কাহিনীর বিভিন্ন চরিত্র রং-তুলি দিয়ে আঁকছেন। আবার ঝুড়িতে রং দিয়ে রাঙিয়ে তুলছেন। তিনি বলেন, একটা সময় আমার হাতে আঁকা সিনারিতে বিভিন্ন পুজো মণ্ডপ সেজে উঠত। এখন সিনারি উঠে যাওয়ায় থিমের জগতে ঢুকে পড়েছি। অনেক শিল্পী পেশা বদল করেছেন ঠিকই। তবে ছবি আঁকা ছাড়া আমরা আর কী-ই বা করতে পারি? এখন থিমের ভাবনায় বদল ঘটেছে। ফেলে দেওয়া নানা সামগ্রী দিয়ে থিম গড়া হচ্ছে। আমরাও সেখানে ছবি আঁকার কাজ পাচ্ছি।

    কাটোয়ার আরেক শিল্পী এককড়ি পাল বলেন, সিনারির ঐতিহ্য এখন আর নেই। এখন থিমের মণ্ডপের নানা জিনিসপত্র রং-তুলি দিয়ে রাঙানো হচ্ছে। সিনারি শিল্পীরা শৈল্পিকতার জোরে তাঁদের জীবিকা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছেন।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)