• বাঁকুড়ার উত্তর বনবিভাগে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৭১ হাতি, মাঠে ধান ও সব্জি নিয়ে উদ্বেগে চাষিরা
    বর্তমান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৭১টি হাতি। বড়জোড়া, সোনামুখী, গঙ্গাজলঘাটি রেঞ্জ এলাকায় হাতিগুলি ছড়িয়ে রয়েছে। শেষ কবে এতগুলি হাতি উত্তর বাঁকুড়ায় ঢুকেছিল, তা বনদপ্তরের আধিকারিক বা স্থানীয়রা মনে করতে পারছেন না। হাতি নিয়ে বনদপ্তর স্থানীয় বাসিন্দাদের ‘অ্যালার্ট’ করেছে। হাতি রয়েছে এমন জঙ্গলে যাতে কেউ অযথা ঘোরাফেরা না করেন, সেব্যাপারে নজর রাখার জন্য দপ্তরের কর্তারা বনকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই হাতির হানায় বেলিয়াতোড়ে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফের হাতি জঙ্গল ছেড়ে বের হলে সমস্যা আরও বাড়বে বলে চাষিদের আশঙ্কা।

    স্থানীয় বাসিন্দা ও চাষিরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যার সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করছেন। হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে গঠিত গণমঞ্চের তরফে বেলিয়াতোড়ে একটি বৈঠক হয়। দ্রুত তাঁদের পক্ষ থেকে বনদপ্তরে ডেপুটেশন জমা দেওয়া হবে বলে সংগঠনের নেতা শুভ্রাংশু মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গত কয়েকমাস বড়জোড়া, বেলিয়াতোড় সহ আশপাশের জঙ্গলে হাতির উপদ্রব ছিল না। হঠাৎ হাতির সংখ্যা বেড়ে ৭১ হয়েছে। অবিলম্বে হাতিগুলিকে ফেরত পাঠানোর দাবি আমরা বনদপ্তরের স্থানীয় আধিকারিকদের জানিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসে ডেপুটেশন জমা দেওয়া হবে। 

    বড়জোড়ার চাষি অমিত মণ্ডল, শিবনাথ পাল বলেন, গতবছর আমন ধান ওঠার সময় হাতির সংখ্যা বড়জোড়ায় কম ছিল। ফলে আমরা নির্বিঘ্নে ধান ঘরে তুলতে পেরেছিলাম। এবার ফসল ফলার আগেই হাতি ধান গাছ মাড়িয়ে দিচ্ছে। হাতির পায়ের চাপে সবজি খেত তছনছ হয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে হাতি না তাড়াতে পারলে ফসলের আশা ছাড়তে হবে।

    বাঁকুড়া উত্তরের ডিএফও জে শেখ ফরিদ এব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। উত্তর বনবিভাগের অন্য এক আধিকারিক বলেন, হাতির হানায় ফসল ও সম্পত্তির ক্ষতি অথবা প্রাণহানি হলে সরকারি নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ মেটানো হয়। বন্য জীবজন্তু জঙ্গলে থাকবে। জঙ্গল থেকে ইচ্ছামতো হাতি তাড়ানো যায় না। তবে তারা যাতে লোকালয়ে বা ফসলের খেতে হানা না দেয়, সেব্যাপারে নজর রাখা হচ্ছে। আমরা এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর বাঁকুড়ার বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিয়েছি। বনদপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন বড়জোড়ার রেঞ্জের পাবয়ার জঙ্গলে ২২টি, গঙ্গাজলঘাটি রেঞ্জের কাল্লাপুরে একটি, সোনামুখী রেঞ্জের পাথরমোড়ায় সাত ও করঞ্চমণি খয়রাশোল এলাকায় ৪১টি হাতি ছিল। কয়েকমাস আগে বড়জোড়ার পাবয়ার জঙ্গলে প্রায় ৬৩টি হাতি ঘাঁটি গেড়েছিল। হাতিগুলি একটি দলেই ছিল। ফলে সেগুলি এক জায়গাতেই ঘোরাফেরা করত। এবার হাতিগুলি বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে। সেই বিষয়টি চাষিদের ভাবাচ্ছে। কারণ একজায়গায় হাতি থাকলে বনকর্মী ও হুলা পার্টির লোকজন তাদের নজরবন্দি করে আটকে রাখে। ৭১টি হাতি ছড়িয়ে গেলে নিয়ন্ত্রণে রাখা মুশকিল হবে। চাষিদের দাবি, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যা হয়, সেই তুলনায় ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় না। ফলে ফসল নষ্ট হলে চাষিদের ভোগান্তির সীমা থাকে না। হাতি তাড়ানোর পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বৃদ্ধির দাবিও চাষিরা তুলেছেন। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)