• মল্লরাজাদের তোপধ্বনি শুনে অযোধ্যার বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে হতো সন্ধিপুজো
    বর্তমান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: নিরন্তর সেবার মাধ্যমে শ্রীরামপুরের নীলকর সাহেবের জীবনের শেষ লগ্নে মন জয় করেছিলেন রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে ভাগ্য খুলে যায় অয্যোধ্যার রামমোহনের। সন্তুষ্ট হয়ে সেই নীলকর সাহেব মৃত্যুশয্যায় রামমোহনকে প্রচুর ধন-রত্ন দান করেন। আর সেই রত্ন-রাজি দিয়েই বিষ্ণুপুরের অযোধ্যায় জমিদারির পত্তন হয়েছিল। প্রচুর ধন, সম্পত্তি থাকলেও গ্রামের একটি পুজো দেখতে গিয়ে ভিড়ের মাঝে জমিদার গিন্নী দেবীদুর্গার ঠিকমতো আরাধনা করতে পারেননি।সেই আক্ষেপ থেকেই অয্যোধ্যার বন্দ্যোপাধ্যায়রা মা দুর্গার পুজোর প্রচলনকরেন। বর্তমানে সেই জমিদারি ও অর্থের প্রাচুর্যদুইই গিয়েছে। জৌলুস কমলেও জমিদারবাড়ির পুজোরঐতিহ্যকিন্তু আজও অমলিন।

    দু’শো বছর আগে অযোধ্যার জমিদার বাড়িতে শুরু হয় দুর্গাপুজো। আজও তা একই রীতি মেনে চলে আসছে। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বন্দ্যোপাধ্যায়দের পরিবারের সদস্যরা পুজোর সময়ই বিষ্ণুপুরের অযোধ্যামুখো হন। তৎকালীন জমিদারের তৈরি ঠাকুরদালান, নাটমন্দির, রাসমঞ্চ আজও অক্ষত। তবে কাছারিবাড়িটিধ্বংসের মুখে। অযোধ্যার বন্দ্যেপাধ্যায়দের জমিদার বাড়ির বর্তমান প্রজন্ম ট্রাস্ট গড়ে পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন। এই ট্রাষ্টের অধীনে যেটুকুজমি রয়েছে, তার আয় থেকেই পুজোর খরচ চলে। 

    জমিদার বাড়ির বর্তমান সদস্য মনোহর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, আগেবিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের তোপধ্বনি শুনে সন্ধিপুজো হতো। এখন পঞ্জিকার সময় অনুযায়ী হয়।এখানে মাকে চালকুমড়ো বলি দেওয়াহয়। এখনও রুপোর পালকিতে করে এবং রুপোর ঘটে নবপত্রিকা আনা হয়।পুজোর তিনদিন উমা মা ও তাঁর পরিবারের জন্য থাকে শীতল ভোগের আয়োজন। থাকে না অন্নভোগ। শীতল ভোগে থাকে মুড়কি, চিড়ে, মোয়া ও নানা রকমের মিষ্টি। 

    জমিদার পরিবারের এক সদস্য সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পুজোর সময় অযোধ্যা ছাড়াও আশপাশের গ্রাম থেকে প্রচুর দর্শনার্থী এখানে আসেন। আমাদের পরিবারের সদস্যরা কর্মসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় থাকেন। তাঁরাও পুজোর সময় আসেন। হই-হুল্লোর করে উৎসবের কটা দিন কেটে যায়। 

    ১৮২৪ সালে অযোধ্যার জমিদারবাড়িতেএই পুজোর প্রচলন হয়। রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড় দাদা কৃষ্ণমোহন শ্রীরামপুর থেকে ভাইয়েরপাঠানো ধন,রত্ন দিয়ে একের পর এক মৌজায় জমি কিনতে থাকেন। একসময় হাতির পিঠে চড়ে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করা হতো এখানে। ধীরে ধীরে বিষ্ণুপুরের অযোধ্যা এলাকায় প্রভাব ও প্রতিপত্তি গড়ে ওঠে বন্দ্যোপাধ্যায়দের। প্রথমে জমিদারবাড়িতেদুর্গাপুজোর প্রচলন ছিল না। গ্রামের মধ্যেই পুজো হতো। পরবর্তীকালে ঠাকুরদালান, রাসমঞ্চ ও নাটমন্দির ছাড়াও ১২টি শিবের মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়।  -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)