• যাত্রীদের মানিব্যাগ, মোবাইল ছিনিয়ে চম্পট দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা, প্রতিদিন চুরি, ছিনতাই, ‘আতঙ্কপুরী’ রামপুরহাট স্টেশন
    বর্তমান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: আতঙ্কের অপর নাম রামপুরহাট জংশনের ১ এ প্ল্যাটফর্ম। সেখানে দিনের আলোয় যাত্রীদের মানিব্যাগ, সোনার হার, মোবাইল ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে। অপরাধীদের ধরতে নাজেহাল রেল। কারণ, অধিকাংশ সিসি ক্যামেরা বিকল। শুধু যে মোবাইল, ব্যাগ ছিনতাই হচ্ছে তাই নয়।  যাত্রী সেজে ট্রেনে উঠে অন্যের ব্যাগ, মালপত্র নামিয়ে নিচ্ছে। কখনও বৃদ্ধদের গায়ে থুতু ছিটিয়ে পালাচ্ছে। সঙ্গের লোকরা পিছু ধাওয়া করলে দ্বিতীয় ব্যক্তি বৃদ্ধর হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে চম্পট দিচ্ছে। এরকম নানা কায়দায় ছিনতাই চলছে রামপুরহাট জংশনে। প্রতিদিন এই স্টেশনে হাজার হাজার যাত্রী ওঠানামা করেন, তারমধ্যে অনেকেই তারাপীঠের পুণ্যার্থী। বহু ভুক্তভোগী যাত্রী লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীরা অধরা থাকছে। এর আগে জিআরপির বক্তব্য ছিল, সিসি ক্যামেরা না থাকার সুযোগ নিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। কয়েকমাস আগে পুরো স্টেশন সিসি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। যা ফলাও করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েও ছিল রেল। কিন্তু তারপরও ছিনতাই থামেনি। 

    সোমবার সকালে রামপুরহাটের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক বাপ্পাদিত্য ব঩ন্দ্যোপাধ্যায় সোনার হার খোয়ান। তিনি বলেন, শাশুড়ি উখরা যাবেন, সেইমতো সকালে রামপুরহাট-অণ্ডাল মেমুতে তাঁকে তুলতে আসি। ট্রেনটি ১ এ প্ল্যাটফর্মে ঢোকে। শাশুড়ি উঠে যাওয়ার পর যখন ব্যাগ দু’টি তাঁর হাতে দিচ্ছিলাম, সেই সময় আমার গলা থেকে হার ছিনিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতী। ওখানে এক সিভিক ভলান্টিয়ার বসে থাকলেও তাঁকে তৎপর হতে দেখা যায়নি। বিষয়টি স্টেশন ম্যানেজারের পাশাপাশি জিআর‌঩পি এবং আরপিএফ অফিসে জানাই। তাঁরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে শুরু করেন। পরে জানান, ওখানে ক্যামেরাটি ঠিকমতো কাজ  করছে না। এবং একটি গাছ থাকার ফলে আড়াল হয়ে যাচ্ছে। রবিবার ভাই সিউড়িতে এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল। এই প্ল্যাটফর্মে এই ট্রেনটিতে ওঠার সময়ে ভাইয়ের মানিব্যাগ ছিনতাই করে নেয় দুষ্কৃতীরা। ব্যস্ততম স্টেশনে যাত্রীদের নিরাপত্তা নেই। 

    এদিন ওই প্ল্যাটফর্ম ঘুরে দেখা গেল, সীমানা পাঁচিল নেই। অবাধে ঘোরাফেরা করছেন মানুষ, কেউ বা গাছের তলায় বসে আছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, সীমানা পাঁচিল না থাকার সুযোগ নিচ্ছে ছিনতাইবাজরা। অপারাধ করে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এক আরপিএফ কর্মী বলেন, প্রতিদিনই এই প্ল্যাটফর্মে ছিনতাই হচ্ছে। ওখানে পুরনো দশটি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। কিন্তু সবক’টি বিকল। তাছাড়া স্টেশনের অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে যে ক্যামেরাগুলি রয়েছে সেগুলির ছবির কোয়ালিটি খুবই খারাপ। সামান্য জুম করলেই ছবি ফেটে যাচ্ছে। কাউকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। 

    এদিন জিআরপির কাছে হার ছিনতাইয়ের অভিযোগ জানান ওই শিক্ষক। জিআরপির আইসি নিত্যরঞ্জন দাস বলেন, দিন তিনেক হল আমি এখানে জয়েন করেছি। ১ এ প্ল্যাটফর্মে সিসি ক্যামেরার একটি সচল। কিন্তু সৌন্দর্যায়নের জন্য লাগানো ফুলগাছে আড়াল হয়ে যাওয়ায় ছবি পাওয়া যাচ্ছে না। গাছটি কাটার উদ্যোগ নিচ্ছি। এক জিআরপির কর্মী বলেন, যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে ওখানে দ্রুত সীমানা পাঁচিল দেওয়া উচিত। 

    অন্যদিকে রামপুরহাট আরপিএফ ইনস্পেক্টর রণধীর কুমার বলেন, ১ এ প্ল্যাটফর্মে থাকা সিসি ক্যামেরাগুলি সারাতে বলা হয়েছে। অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের সিসি ক্যামেরাগুলি কখনও রেকর্ডিং হচ্ছে, কখনও হচ্ছে না। টেকনিক্যাল সমস্যা হচ্ছে। এই বিষয়টিও উপর মহলে জানিয়েছি।
  • Link to this news (বর্তমান)