• সেমেস্টার পরীক্ষায় মেয়ের নম্বর কম, শিক্ষিকাকে ফোনে হুমকি, গাংনাপুরে অভিযুক্ত স্থানীয় তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি
    বর্তমান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: মেয়েকে ৩ নম্বর কম দিয়েছেন স্কুলের শিক্ষিকা। তারজন্য ফোন করে ওই শিক্ষিকাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল স্থানীয় তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধে। নদীয়ার গাংনাপুর এলাকার ওই ঘটনায় ব্যাপক শোরগোল পড়েছে। ইতিমধ্যেই ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে জেলা ও মহকুমার শিক্ষাদপ্তরে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে।

    জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত সুবীর ধর দেবগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি। একইসঙ্গে গাংনাপুর বয়েজ হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতিও। তাঁর মেয়ে গাংনাপুর গার্লস হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। গত ২৫ আগস্ট ওই স্কুলের পরিবেশ বিজ্ঞান পরীক্ষা ছিল। স্কুলের শিক্ষিকা সুজাতা বিশ্বাস সেই বিষয়ে দ্বিতীয় সেমেস্টারের পরীক্ষা নেন। খাতা দেখার পর তা পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওই ছাত্রী সেই খাতা নিয়ে গিয়ে তার বাবাকে দেখায়। অভিযোগ, এরপর তৃণমূল নেতা ওই শিক্ষিকাকে ফোন করেন। রীতিমতো হুমকির সুরে তাঁকে শাসানো হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর মেয়েকে ৩ নম্বর কম দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। সেই নম্বর দেওয়ার জন্য ওই শিক্ষিকাকে চাপ দেওয়া হয়। আতঙ্কিত ওই শিক্ষিকা বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে জানান। পরে ওই ছাত্রীর খাতা পুনর্মূল্যায়ন করেন স্কুলের শিক্ষিকারা। তাতে দেখা যায়, দু’টি প্রশ্নের উত্তর ভুল লিখেছে ওই ছাত্রী। ফলে যে নম্বর কাটা গিয়েছে, তা যথাযথ। তা সত্ত্বেও তাঁকে নম্বর দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ওই শিক্ষিকার। 

    বিষয়টি জানার পর গাংনাপুর বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সোমা বিশ্বাস লিখিতভাবে জেলা শিক্ষাদপ্তর ও মহকুমা শিক্ষাদপ্তরে অভিযোগ জানান। শিক্ষিকা সুজাতাদেবী বলেন, ২৭ আগস্ট স্কুলে খাতা দেখানো হয়েছিল। আমি প্রত্যেককে বলে দিই কোথায় ভুল হয়েছে এবং কী কারণে নম্বর কাটা হয়েছে। পরে ওই ব্যক্তি আমাকে ফোন করে ভুল উত্তরে নম্বর দেওয়ার জন্য কার্যত চাপ দেন। আমি বিষয়টি তাঁকেও বুঝিয়ে বলি। কিন্তু, উনি শোনেননি। প্রথম দিকে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাই।

    স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সোমা বিশ্বাস বলেন, হুমকির সুরে ওই তৃণমূল নেতা আমাদের বলেন, যে ইচ্ছে করে নাকি এই নম্বর কেটে নেওয়া হয়েছে। বাস্তবে তা নয়। ভুল উত্তর লেখার জন্যই নম্বর কাটা হয়েছে। তারপরও ওই তৃণমূল নেতা জানান, তিনি খাতা ফেরত পাঠাবেন এবং তাতে যেন আমরা নম্বর দিয়ে দিই।

    অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা সুবীরবাবু বলেন, আমার মেয়ে লিখেছিল পৃথিবীর সমস্ত শক্তির উৎস সূর্যের আলো। এটার কি অস্বীকার করার মতো বৈজ্ঞানিক কোনও ভিত্তি রয়েছে? গাছ কীভাবে পাতার সবুজ কণার মাধ্যমে সূর্যের আলোকে ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করে, তা আমি উঁচু ক্লাসের বইয়ের রেফারেন্স দিয়ে পর্যন্ত তুলে ধরেছিলাম। তাহলে বিষয়টি কেন হুমকি হিসেবে ধরা হচ্ছে? যদি সত্যিই আমি হুমকি দিয়ে থাকি তাহলে উনি ফোন রেকর্ডিং প্রকাশ্যে আনুন। আমি তো যুক্তি এবং বই ধরে উদাহরণ দিয়ে বলেছি। 

    রানাঘাট মহকুমার অতিরিক্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক নিহাররঞ্জন সরকার বলেন, একটা অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)