সূর্যমন্দির থেকে কালীয়দমন, বাঙালির সেরা উৎসবে লাইভ শোয়ের আকর্ষণ, পুজোয় হুগলিতে অতিরিক্ত বিনোদন
বর্তমান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: সাবেক পুজোতে বদল এসেছে বহুকাল। এসেছে থিম সংস্কৃতি। সেই থিমও নানাভাবে বদলেছে নিজেকে। তাতে সংযুক্ত হয়েছে নয়া পালক, লাইভ শো। কখনও লাইট অ্যান্ড সাউন্ড, কখনও বা থিমের বিষয়বস্তুকে চলমান পর্দায় তুলে ধরা। এমন নানা আঙ্গিক জুড়েছে শারদীয়ার অঙ্গনে। হুগলিতে এবার থিমের বাড়বাড়ন্ত যেমন আছে তেমনই আছে লাইভ শো। কোথাও তার আধার হয়ে উঠছে কৃষ্ণলীলা তো কোথাও সূর্যবন্দনা। মনোরম থিমের পাশাপাশি পুজো মরশুমে বাড়তি কিছু খুঁজতে বের হওয়া দর্শকের জন্যও থাকছে অতিরিক্ত বিনোদনের ডাক।
ভারতে পুরাণ থেকে সংস্কৃতিতে সূর্যদেবতার ভূমিকা বিপুল। সেই সূর্যদেবতার খ্যাতনামা মন্দির এই ভারত ভূখণ্ডেই, কোনারকের সূর্যমন্দির। সেই মন্দিরই এবার হুগলির শ্রীরামপুরের পাঁচ ও ছ’য়ের পল্লির থিম। ওই পুজোর প্রধান পৃষ্ঠপোষক শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সূর্যমন্দিরকে থিম করাই নয়, লাইভ শো দেখানোর প্রস্তুতিও নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। ১১২ বছরে পা দেওয়া পাঁচ ও ছ’য়ের পল্লির ময়দানে সেই কাঠামো ইতিমধ্যেই অনেকটা আকার নিয়ে নিয়েছে। দেবী দশভুজা বরাবরের মতো এবারও সাবেক চেহারায় উপস্থিত থাকবেন। ফাইবার দিয়ে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। অন্দরসজ্জায় পাথুরে সৌন্দর্য। কিন্তু সেখানেই থামছেন না উদ্যোক্তারা। সূর্যমন্দিরকে কেন্দ্র করে বিশেষ লাইভ শো করতে বেঙ্গালুরু থেকে কলাকুশলীদের আনা হয়েছে। মণ্ডপের উপর সূর্যের সাত ঘোড়ার ছুটে যাওয়া থেকে একাধিক নয়নাভিরাম দৃশ্য তাঁরা তৈরি করবেন। দেবী দর্শনের আগেই সামনে আসবে এই অনবদ্য দর্শনীয় বিষয়। ক্লাবকর্তা তথা শ্রীরামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল সদস্য সন্তোষ সিং(পাপ্পু) বলেন, আমাদের পুজোকে ঘিরে এমনিতেই দর্শকদের বিপুল আগ্রহ থাকে। এবার আমরা বিশেষ লাইভ শো করব। তাতে দর্শকদের বাড়তি মনোরঞ্জনের সুযোগ মিলবে।
শ্রীরামপুরে লাইভ শো যদি সূর্যকেন্দ্রীক হয় তবে বৈদ্যবাটির লাইভ শো কৃষ্ণলীলাকে কেন্দ্র করে। আরও ভালো করে বললে কৃষ্ণের বাললীলার বিখ্যাত অংশ ‘কালীয়দমন’ নিয়ে লাইভ শো দেখা যাবে। আয়োজক ঐক্যতান ক্লাবের নার্সারি রোড বারোয়ারির পুজো কমিটি। পুরো মণ্ডপটাই তৈরি হচ্ছে গোকুলের আদলে। থাকবে বেগবান যমুনা। সেই জলে আবির্ভাব হবে বিরাট ভয়ঙ্কর কালীয় নাগের। ক্লাবকর্তারা বৈষ্ণব আখ্যানের সঙ্গে শক্তি আরাধনাকে মিলিয়ে দেবীকে রাজকীয় সাজে হাজির করছেন মণ্ডপে। ক্লাবকর্তা রঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, আক্ষরিক অর্থেই জীবন্ত কালীয়দমন দেখাতে আমাদের শিল্পীরা দিনরাত খাটছেন। এবারের পুজোতে আমাদের সমস্ত আয়োজনই অভিনব। ভিন্ন রকমের আলোকসজ্জাও দর্শকদের উপভোগ্য হবে।
বাঙালি দু’হাত দিয়ে বরাবরই যাবতীয় কিছু সাদরে গ্রহণ করেছে। তার সবচেয়ে বড় উৎসব তাই উদার। সেই পরিসরে জুড়ে যান শাক্ত, বৈষ্ণব। জুড়ে যায় আধুনিক থিমের সঙ্গে লাইভ শো। গঙ্গাপাড়ের নগরীতে এখন সেই মিলনোৎসবের পর্দা ওঠাই যা বাকি।