সালকিয়ায় চক্রবর্তী বাড়ি আসার আগে মা ভবতারিণীর মুখোমুখী হন দেবী দুর্গা
বর্তমান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এলাকার কালীমন্দিরে সারা বছরই পূজিত হন মা ভবতারিণী। এদিকে, হাওড়ার সালকিয়ায় ধর্মতলা বাজারের চক্রবর্তী বাড়িতে পুজো নিতে মা দুর্গা আসেন ঠিকই, কিন্তু কুমোরের ঘর থেকে বাড়িতে প্রবেশের আগে তিনি মুখোমুখি হন মা ভবতারিণীর। কালী প্রতিমার সামনে কিছুক্ষণ অধিষ্ঠান করেন দেবী দুর্গা। তারপর তিনি সপরিবারে আসেন ধর্মতলা রোডের চক্রবর্তী বাড়িতে। ডাকের সাজে সাজেন তিনি। দেড়শো বছরেরও বেশি পুরনো পুজোয় এটাই ঐতিহ্য।
মা ভবতারিণীর সঙ্গে পারিবারিক দুর্গাপুজোর উপাচার এখানেই শেষ নয়। পরিবারের কর্তা তনুজ চক্রবর্তীর কথায়, আমাদের বাড়ির পুজোয় সপ্তমীতে ভোগ হিসেবে মাকে নিবেদন করা হয় খিচুড়ি, পাঁচ রকমের ভাজা, তরকারি, পায়েস। অষ্টমীতে লুচি, দু’রকমের তরকারির সঙ্গে থাকে চালের পায়েস। নবমীতে পোলাওয়ের সঙ্গে থাকে দু’রকমের তরকারি ও পায়েস। মা দুর্গার জন্য ভোগের যে আয়োজন হয়, তার একটি অংশ সবার আগে নিবেদন করা হয় মা ভবতারিণীকে। তারপর ভোগ পরিবেশন করা হয় মা দুর্গাকে। তনুজবাবুর কথায়, আমাদের বাড়ির পুজো মাঝে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। তা ফের চালু হয়েছে সকলের ইচ্ছা ও আশীর্বাদে। আমাদের বাড়িতে কয়েকশো মানুষ আসেন প্রতিদিন। তাঁদের আহারের ব্যবস্থা করা হয়। তার সঙ্গে থাকে ভোগের প্রসাদ। সন্ধিপুজোয় চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। তা রান্না হওয়ার পর সেই প্রসাদও পান সকলে, জানিয়েছেন তনুজবাবু। তাঁর কথায়, কালীমন্ত্রে আমি দীক্ষিত। তাই পুজোয় সঙ্কল্পে আমিই বসি, কুমারী পুজো ও হোম আমি নিজেই করি। এই বাড়িতে কুমারী পুজো একটি জাঁকজমকপূর্ণ উপাচার, জানিয়েছেন বাড়ির সদস্যরা। নবমীতে বেনারসী, গয়না ও ফুলে সাজানো হয় কুমারীকে। তাকে ঘিরে সবার আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। তবে এই অনুষ্ঠানে পুজিত হন একজন সধবা নারীও। কাপড়, আলতা, সিঁদুর, থালায় সাজানো মিষ্টি দিয়ে উপাসনা করা হয় তাঁকে।
বাড়ির প্রবীণ কর্ত্রী ইন্দিরা চক্রবর্তীর কথায়, আমাদের বাড়ির পুজোয় দেবীর ঘট, চণ্ডীর ঘট এবং গণেশের ঘট বসানো হয়। চক্রবর্তী পরিবারের পুরুষরাই সেই ঘট গঙ্গায় নিয়ে যান। আমাদের বাড়ির পুজো উপাচারের অন্যতম দিক হল দশমীর উপবাস এবং আগুন না জ্বালানো। দশমীতে দেবীবরণের আগে বাড়িতে উনুন সহ সব আগুন নিভিয়ে দেওয়া হয়। বরণের পর, বিসর্জন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, তবেই বাড়ির সদস্যরা উপবাস ভাঙেন। এটাই রীতি। বিদায় জানানোর আগে না খেয়ে দেবীর কাছে আবদার করেন সকলে, আবার এস মা আনন্দময়ী। মঙ্গল কর সকলের।