দত্তকের নামে লাখ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে একের পর এক দুগ্ধপোষ্য শিশু! যোগীরাজ্যে ফাঁস নয়া কেলেঙ্কারি...
আজকাল | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লি ও উত্তর ভারতের এক বিস্তৃত শিশু পাচার চক্র সম্প্রতি ফাঁস করেছে দিল্লি পুলিশ। ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ছয়টি শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। খবর অনুযায়ী, অভিযুক্তদের মধ্যে একজন চিকিৎসকও রয়েছেন। তিনি অবৈধ পদ্ধতিতে শিশুদের সন্তানহীন দম্পতিদের কাছে বিক্রি করতেন। বিক্রয়মূল্য ছিল ১.৮ লাখ থেকে ৭.৫ লাখ টাকার মধ্যে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই পাচার চক্রের মূল হোতা ৩৫ বছর বয়সী সুন্দর। তিনি একজন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে কাজ করতেন। তিনি অভিভাবক এবং শিশু ক্রেতাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতেন। কিছু ভুয়ো ডাক্তার বা কোয়াকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ওষুধের মাধ্যমে সন্তান পাচারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাতেন।
এই চক্রে জড়িত একজন চিকিৎসক হচ্ছেন ডঃ কমলেশ কুমার (৩৩), যিনি আগ্রা জেলার ফতেহাবাদের কেকে হাসপাতালের মালিক। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গর্ভপাত করাতে না পারা মায়েদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ডেলিভারির পর তিনি সেই শিশুদের বিক্রি করে দিতেন। ছদ্মবেশে রোগী সেজে পুলিশ তাঁর চেম্বারে ঢুকে তাঁকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে।
অভিযুক্তদের মধ্যে আরও রয়েছেন দুই বোন- কৃষ্ণা (২৮) এবং প্রীতি (৩০)। কৃষ্ণা বিএএমএস কোর্সের শেষ বর্ষের ছাত্রী এবং প্রীতি ইতিমধ্যে ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। এই দুই বোন অবাঞ্ছিত শিশু প্রসব করানোর কাজে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনার সূত্রপাত ২২ অগাস্ট। উত্তরপ্রদেশের বান্দা জেলার এক ইটভাটার শ্রমিক সুরেশ অভিযোগ করেন যে, দিল্লির সারাই কালে খান ISBT-তে রাত ১১টার দিকে ঘুমের মধ্যে তাঁর ছয় মাসের শিশু সন্তান নিখোঁজ হয়ে যায়।
এরপর সানলাইট কলোনি থানায় অপহরণ এবং শিশু পাচারের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। ISBT-র সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সন্দেহজনকভাবে এক শিশুকে নিয়ে যাওয়া দু'জন পুরুষকে শনাক্ত করা হয়। এরপর মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে পুলিশ প্রথমে ফতেহাবাদের পিনাহাট এলাকা থেকে ৩০ বছর বয়সী বীরভানকে গ্রেপ্তার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, তার শ্বশুর কালিচরণ (৪৫)-এর সঙ্গে মিলে রামবারণ নামের এক ব্যক্তির নির্দেশে শিশুটিকে অপহরণ করে কেকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ডাক্তার কমলেশ তাঁদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে নগদ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এরপর পুলিশ রোগী সেজে হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে কমলেশকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে কমলেশ জানায়, শিশুটিকে আগ্রার ফিরোজাবাদ এলাকার সুন্দর নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
পরে সুন্দরকে ইউপি-রাজস্থান সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে পুলিশ কৃষ্ণা শর্মা ও প্রীতি শর্মা নামের এক দম্পতির বাড়িতে হানা দিয়ে অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধার করে। শিশুটিকে তার প্রকৃত মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেয়।পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে কৃষ্ণা ও প্রীতি জানায়, তারা এই শিশুটিকে পুনরায় জ্যোৎস্না নামে এক মহিলার কাছে বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছিল। এক্ষেত্রে রিতু নামের একজন অভিযুক্ত সাহায্য করে। তারা আরও স্বীকার করে যে, পূর্বে তারা আরও একটি শিশুকে উত্তরাখণ্ডের নৈনিতালের এক দম্পতির কাছে বিক্রি করেছিল।
নৈনিতালে পুলিশ হানা দিয়ে সেই শিশুটিকেও উদ্ধার করে। এরপর প্রযুক্তিগত নজরদারির মাধ্যমে রিতুর বাড়ি চিহ্নিত করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আগ্রা ও লখনউয়ে অভিযান চালিয়ে জ্যোৎস্নাকে গ্রেপ্তার এবং আরও একটি দুই মাসের শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
আরও এক অভিযুক্ত নিখিলের কাছ থেকে এক বছর বয়সী একটি মেয়ে শিশুকে উদ্ধার করা হয়। এই শিশুকে ফতেহাবাদের এক পরিবারে বিক্রি করেছিল। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, হায়দরাবাদ, চেন্নাই এবং উত্তরাখণ্ড জুড়ে একটি সুসংগঠিত শিশু পাচার চক্র সক্রিয় রয়েছে, যারা বাসস্ট্যান্ড ও রেল স্টেশনে ঘুরে বেড়ানো অসহায় পরিবারদের লক্ষ্য করে শিশু অপহরণ করে বিক্রি করে।
এই মামলায় এখনও পর্যন্ত চারজন অভিযুক্ত- বীরভান, কালিচরণ, প্রীতি শর্মা ও জ্যোৎস্না- কে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের- সুন্দর, ড. কমলেশ, রিতু, কৃষ্ণা শর্মা ও রুবিনা- পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সুন্দর এর আগেও শিশু জন্ম রোধ ও লিঙ্গ নির্ধারণ বিরোধী আইন এবং নতুন ভারতীয় দণ্ডবিধির (BNS) ৬১(২), ৩১৮ ও ৯১ ধারায় অভিযুক্ত ছিলেন। রিতুও মানব পাচার আইনের আওতায় আগের একটি মামলার আসামি ছিলেন।
এখনও এই চক্রের আরও সদস্যদের সন্ধানে তদন্ত চলছে। এ পর্যন্ত অপহৃত একটি শিশুকে তার পিতামাতার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং বাকি পাঁচটি শিশুকে শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে, যাদেরকে পরবর্তীতে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সামনে উপস্থাপন করা হবে। পুলিশ জানিয়েছে, BNS-এর অপহরণ, পাচার, ষড়যন্ত্র ও শিশু সুরক্ষা আইনের ধারা অনুযায়ী কঠোর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং তদন্ত এখনও চলমান।