নবান্ন-অনুদান নিতে এক সপ্তাহে প্রায় ৪০ হাজার আবেদন পড়ল ‘শ্রমশ্রী’তে, বঙ্গের ২২ লক্ষেরও বেশি শ্রমিক ভিন্রাজ্যে পরিযায়ী
আনন্দবাজার | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ভিন্রাজ্যে কর্মরত বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগের আবহে নতুন প্রকল্প ঘোষণা করেছে রাজ্যে সরকার। শ্রম দফতর সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষিত সেই ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৪০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে নতুন পোর্টালে। এ বার শুরু হবে ঝাড়াইবাছাই। অগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে অফলাইনে আবেদন জমা পড়তে শুরু করেছিল। অনলাইন পোর্টাল চালু হয়েছে গত সোমবার।
রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, বাইরে থেকে পরিযায়ী শ্রমিকেরা পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে চাইলে তাঁদের এককালীন ৫,০০০ টাকা দেবে রাজ্য। নতুন কাজ না পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের টানা ১২ মাস মাসিক ৫,০০০ টাকা করে দেওয়া হবে। রাজ্য সরকারের হিসাব অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের ২২ লক্ষ ৪০ হাজার শ্রমিক ভিন্রাজ্যে কর্মরত। নতুন প্রকল্প শুরু হওয়ার প্রথম সপ্তাহে ফেরার তাগিদ দেখিয়েছেন তাঁদের মধ্যে ৪০ হাজার। তবে এখনই সংখ্যার হার নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি শ্রম দফতরের আধিকারিক বা শাসকদলের নেতৃত্ব। তাঁদের সকলেরই বক্তব্য, যত সময় এগোবে, তত এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এখনও পর্যন্ত যা আবেদন জমা পড়েছে, তাতে জেলাগত ভাবে তালিকার উপর দিকে রয়েছে মুর্শিদাবাদ এবং মালদহ।
কোভিডের সময়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিল নবান্ন। সেই পর্বে যাঁরা রাজ্যে ফিরেছিলেন, তাঁদের নাম নথিভুক্ত করতে ‘কর্মশ্রী’ পোর্টাল চালু করেছিল নবান্ন। যাঁদের ইতিমধ্যেই ‘কর্মশ্রী’তে নাম রয়েছে তাঁরা তো ‘শ্রমশ্রী’তে আবেদন করতে পারবেনই, পাশাপাশিই যাঁদের নাম ‘কর্মশ্রী’তে নেই, তাঁরাও পারবেন আবেদন করতে। তবে ঝাড়াইবাছাই করে, তথ্য যাচাই করেই তালিকা চূড়ান্ত করবে নবান্ন। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জেলাশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন, আবেদনের সঙ্গে যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য জমা পড়েছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ, সরাসরি ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের মাধ্যমেই এই টাকা যাবে রাজ্যে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে। যাঁরা আবেদন করছেন, তাঁরা কোন রাজ্যে কী কাজ করতেন, সে ব্যাপারেও তথ্য যাচাই করবে প্রশাসন।
রাজনৈতিক মহলের অনেকের বক্তব্য, রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট অভিমুখ নিয়েই এই ঘোষণা করেছে। তাঁদের মতে, আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই এই প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ, ‘শ্রমশ্রী’তে এক বছরের কথাই বলা হয়েছে। এই পর্বের মধ্যেই বিধানসভা ভোট মিটে যাওয়ার কথা। তা ছাড়া রাজ্য চাইছে ভোটের আগে পৃথক একটি উপভোক্তা গোষ্ঠী (বেনিফিশিয়ারি গ্রুপ) তৈরি করতে। যে ভাবে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে প্রায় ৬৯ লক্ষ শ্রমিকের বকেয়া মজুরি নিজস্ব তহবিল থেকে মিটিয়ে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। অনেকেরই ধারণা, ভোটে তার ইতিবাচক ফল মিলেছিল। ‘শ্রমশ্রী’তে পরিযায়ীদের সংখ্যা শেষ পর্যন্ত কত হয়, আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে প্রশাসন এবং শাসক তৃণমূল।