চিকিৎসক, নার্স বা অ্যাম্বুল্যান্স কোনও কিছুরই সুষ্ঠু ব্যবস্থা হয়নি। তাই চালু হয়নি ২০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রকল্প। চা-বাগানের শ্রমিক পরিবারের ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাতায়াতের সুবিধার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উৎসাহে ১১টি রুটে স্কুল-বাস চালু করার প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে প্রায় তিন কোটি ১৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে কিন্তু আড়াই বছর পেরিয়ে একটি বাসও রাস্তায় নামেনি! তার উপরে এই প্রথম চা-বাগানে একতরফা বোনাসের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হওয়ায় ধূমায়িত হচ্ছে অসন্তোষ। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ফের জলপাইগুড়ি যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এ বারের সফরে চা-শ্রমিকদের পাট্টা-সহ সরকারি নানা প্রকল্পের বিলি-বণ্টন করার কর্মসূচি রয়েছে তাঁর।
মাস চারেকের মধ্যে দ্বিতীয় বার জলপাইগুড়ি জেলায় সরকারি সভা করতে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর আজ, মঙ্গলবার বাগডোগরা হয়ে উত্তরবঙ্গে পৌঁছে রাতে উত্তরকন্যার ‘কন্যাশ্রী’ বাংলোতে থাকার কথা। শিলিগুড়ি থেকে বুধবার সড়ক-পথে জলপাইগুড়ি গিয়ে এবিপিসি মাঠে সরকারি জনসভা তাঁর। জলপাইগুড়ি পুর-এলাকার নানা প্রকল্পের উদ্বোধন হওয়ার কথা সেখানে। সভা সেরে মুখ্যমন্ত্রী ফের সড়ক-পথে শিলিগুড়ি ফিরতে পারেন।
মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের আগে সরকারি স্তরে ও শাসক শিবিরের অন্দরে নানা অস্বস্তিকর প্রশ্ন দানা বাঁধছে। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার চা-বাগান এলাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শুরু করে স্কুল-বাসের প্রকল্প কার্যকর না-হওয়ায় শাসক শিবিরে অসন্তোষ আছে। সরকারের একটি সূত্রের খবর, শ্রম দফতরের নির্মাণ পর্ষদের তহবিল থেকে যে টাকার বন্দোবস্ত হয়ে যাওয়ার পরেও সরকারি প্রক্রিয়া এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে চা-শ্রমিকদের বোনাস ঘোষণা নিয়ে টানাপড়েন। তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় কোনও শ্রমিক সংগঠনকে আলোচনায় না-ডেকে শ্রম দফতর থেকে যে ভাবে ২০% বোনাস ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে, সেই পদ্ধতি নিয়ে তাঁদের আপত্তি ও প্রশ্নের কথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকে তুলেছেন শাসক দলের নেতাদের একাংশ। এই হারে বোনাস দেওয়া সম্ভব নয় বলে চা-বাগান মালিকদের একাংশ সরকারকে চিঠি দিতে শুরু করেছেন। শাসক দলের নেতৃত্বের একাংশের আশঙ্কা, বাড়তি বোনাসের কারণ দেখিয়ে কেউ চা-বাগান বন্ধ করে দিলে তার ‘দায়! তাঁদের উপরে চাপবে। অথচ সিদ্ধান্তে তাঁদের কোনও ভূমিকাই ছিল না।
সরকারি স্তরে এই বিষয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আগে ঘোষিত প্রকল্প হিসেবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা স্কুল-বাস এত দিনে চালু হয়ে যাওয়া উচিত ছিল।’’ পাশাপাশি, শাসক দলের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘তাড়াহুড়ো করে একতরফা বোনাস ঘোষণা করে এখন পিছিয়ে আসা সরকারের পক্ষে বিড়ম্বনার। আবার তার জের সামাল দেওয়াও মুশকিল!’’
মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে সোমবার বৈঠকে বসেছিল জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল। একটি সূত্রের বক্তব্য, গত লোকসভা ভোটে জলপাইগুড়ি আসনে হারের পরে জেলায় দলের সংগঠনের হাল ‘বিগড়েছে’। সম্প্রতি সাংগঠনিক রদবদলে আদি এবং অভিজ্ঞ নেতাদের দায়িত্বে আনা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী গিয়ে উন্নয়নের প্রকল্প দিয়ে শহর তথা জেলাবাসীর মন জয়ের চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গেই দলের নেতাদের রাজনৈতিক বার্তা দিতে পারেন বলে মনে করছেন দলের নেতারা।