• ৯০ জনের স্কুলে আজ ৫৬ পড়ুয়া
    আনন্দবাজার | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • বেলা ১১টা। তখনও স্কুল শুরু হয়নি। চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রী প্রার্থনার ঘণ্টা বাজানো মাত্র ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের দোতলার বারান্দায় সারি দিয়ে দাঁড়াল। প্রার্থনা শেষ হতে চলে গেল ক্লাসে। স্কুল ভবনের নীচের তলায় তখন প্রথম শ্রেণির পড়ুয়াদের হট্টগোল থামাতে ব্যস্ত চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।

    কেন এ কাজ করতে হচ্ছে? জবাব এল, “উপরে এক জন স্যর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের ক্লাস নিচ্ছেন। শেষ করে নীচে নেমে প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস নেবেন। স্যর যতক্ষণ না নামছেন, এই দুই ক্লাস সামলানোর দায়িত্ব আমার।”

    পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে একটি স্কুলের পড়াশোনা কী ভাবে শিকেয় ওঠে, তার উদাহরণ বীরভূমের রামপুরহাট পশ্চিম চক্রের অধীন দেবগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, ৬০ জন পড়ুয়া পিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দু’জন স্থায়ী শিক্ষক থাকা উচিত। রামপুরহাট ১ ব্লকের আয়াস পঞ্চায়েতের নাছিয়া ও দেবগ্রাম, এই দু’টি গ্রামের পড়ুয়াদের জন্য এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন ৫৬ জন পড়ুয়া। স্থায়ী শিক্ষক এক জন। তিনিই প্রধান শিক্ষক। ফেব্রুয়ারিতে এক শিক্ষক এসেছেন ডেপুটেশনে। প্রতিদিন স্কুল চলাকালীন প্রধান শিক্ষককে মিড ডে মিলের হিসাব রাখা থেকে রান্নার দেখভাল, অফিসের যাবতীয় কাজকর্ম দেখতে হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক তা হলে পড়াবেন কখন?

    স্কুলের পড়ুয়াদের গড় হাজিরা ৮০ শতাংশ। চতুর্থ শ্রেণির একাধিক ছাত্রছাত্রী জানাল, শিক্ষকের অভাবে সে ভাবে পড়াশোনা হয় না। স্কুলের একমাত্র স্থায়ী শিক্ষক আবু সুফিয়ান ১৪ বছর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন। বললেন, “২০১৫ সাল পর্যন্ত তিন জন শিক্ষক ছিলেন। তখন ৯০ জন পড়ুয়া ছিল। দুই শিক্ষক অবসর নেওয়ার পরে স্থায়ী শিক্ষক শুধু আমি।” ফল? প্রতি বছর দেবগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গড়ে ১০ জন করে স্কুলছুট হচ্ছে। অনেকেই সন্তানদের পাশের গ্রাম লম্বোদরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন।

    প্রধান শিক্ষক জানালেন, ফেব্রুয়ারিতে এক শিক্ষককে অস্থায়ী ভাবে নিযুক্ত করা হয়েছে। তাতেও সমস্যা মিটছে না। স্কুল শিক্ষা দফতরের রামপুরহাট পশ্চিম চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক দেবব্রত ঘোষ বলেন, “কর্তৃপক্ষকে জানানো আছে। প্রক্রিয়া শুরু হলে দেবগ্রামেও শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।” তত দিনে আরও কত বাচ্চা স্কুলছুট হবে?
  • Link to this news (আনন্দবাজার)