• প্রসব ১৪ বছরের কিশোরীর, পকসো আইনে গ্রেফতার স্বামী
    আনন্দবাজার | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • এক নাবালিকার প্রসবের ঘটনায় তার স্বামীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সম্প্রতি এসএসকেএমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেয় ১৪ বছরের ওই কিশোরী। জন্মের পরে সেই সন্তানের মৃত্যুও হয়। তৎক্ষণাৎ ভবানীপুর থানাকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। কলকাতার ওই থানার ‘জ়িরো এফআইআর’-এর ভিত্তিতে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সাগরদিঘি থানা কিশোরীর স্বামীকে গ্রেফতার করে।

    ধৃতের বিরুদ্ধে নাবালিকাকে বিয়ে এবং সহবাসের অভিযোগে পকসো আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। আদালতের নির্দেশে ওই যুবককে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়। আর নাবালিকা মায়ের কাছে যেতে রাজি না হওয়ায় তাকে হোমে পাঠানো হয়েছে।

    মুর্শিদাবাদে বাল্যবিবাহের হার অন্য জেলার থেকে বেশি। এমনকি, স্বাস্থ্য দফতরের নথি থেকেও জানা যায়, ওই জেলায় নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা রাজ্যের মধ্যে সর্বাধিক। মাসকয়েক আগে রাজ্যে প্রসূতি-মৃত্যুর হার পর্যালোচনা করতে গিয়ে চোখ কপালে উঠেছিল স্বাস্থ্যকর্তাদের। নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যার নিরিখে রাজ্যের ১৭টি জেলাকে উদ্বেগজনক বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। স্বাস্থ্য ভবনের তরফে স্পষ্ট নির্দেশিকা ছিল, কোনও নাবালিকা প্রসূতি ভর্তি হলে সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকে জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজ বা হাসপাতালের তরফে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, উদ্বেগের তালিকায় প্রথম তিনে ছিল মুর্শিদাবাদ, রামপুরহাট (স্বাস্থ্য জেলা) ও বীরভূম। পাশাপাশি, আরও ১৪টি জেলায় নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা বাড়ছে বলেই পর্যবেক্ষণ ছিল স্বাস্থ্যকর্তাদের। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, প্রতি বছর এ রাজ্যে যত প্রসূতি-মৃত্যু হয়, তার অন্তত ১৪ শতাংশই নাবালিকা। ২০২৩-২০২৪ আর্থিক বর্ষে রাজ্যে সেই হার ছিল ১৬-১৭ শতাংশ। ২০২৪-২০২৫ আর্থিক বর্ষে সামান্য কমে তা হয়েছিল ১৪-১৫ শতাংশ। স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, রাজ্যে প্রসূতি-মৃত্যুর হার কমাতে সর্বপ্রথম নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে হবে।

    জানা যাচ্ছে, এক বছর আগে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার বাসিন্দা ওই নাবালিকা পালিয়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক যুবককে বিয়ে করে। পরবর্তী সময়ে ওই যুবকের পরিবার বিয়ে মেনে নেওয়ায় শ্বশুরবাড়িতেই থাকতে শুরু করে নাবালিকা। দিনকয়েক আগে গর্ভবতী ওই কিশোরীর শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে তাকে প্রথমে মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে জেলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও পরে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। এর পরেই পরিজনেরা ওই কিশোরীকে এসএসকেএমে ভর্তি করেন। তখন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ভবানীপুর থানায় খবর দিলে পুলিশ নাবালিকার বয়ান নথিভুক্ত করে। ওই জবানবন্দিকেই অভিযোগ হিসাবে ধরে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করে জঙ্গিপুর জেলা পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেয়। পরের দিনই ওই যুবককে সেখানকার পুলিশ গ্রেফতার করে।

    কিন্তু প্রশ্ন হল, যে মহকুমা হাসপাতাল এবং জেলা মেডিক্যাল কলেজে ওই নাবালিকাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে কেন স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকে প্রথমেই জানানো হয়নি? স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘প্রতিটি জেলাকে বার বার সতর্ক করা হচ্ছে। মেডিক্যাল কলেজগুলিকেও বলা হয়েছে। তার পরেও কেন এমন হল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)