এ বছর কলকাতায় বর্ষা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয়। ফলে দুর্গোৎসবের আয়োজন নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে শহর প্রশাসনের অন্দরে। সোমবার কলকাতা পুরসভায় পুজোর প্রস্তুতি বৈঠকে সেই দুশ্চিন্তাই উঠে এল মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং আধিকারিকদের আলোচনায়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ফিরহাদ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘‘বর্ষায় পুজো হবে। তাই আগে থেকেই সমস্ত প্রস্তুতি নিতে হবে।’’
মেয়র জানান, শহরে যে সব রাস্তায় নিয়মিত জল জমে, সেগুলির বিস্তারিত রিপোর্ট পুলিশকে দিতে বলা হয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুরসভার পরিকল্পনা অনুযায়ী, পুজোর সময় জল জমা রাস্তাগুলিতে পেভার ব্লক কংক্রিট বসানো হবে। উদ্দেশ্য একটাই—অতিবৃষ্টিতে যাতে মানুষকে ভোগান্তির মুখে না পড়তে হয়। ফিরহাদ বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য, ভিজে পুজো নয়, বরং নির্বিঘ্ন পুজো।’’ পাশাপাশি, নিকাশি বিভাগকে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুজোর সময় অতিবৃষ্টি হলে যাতে দ্রুত জল নামানো যায়, তার জন্য সব পাম্পিং স্টেশন আগেই প্রস্তুত থাকবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত অস্থায়ী পাম্প বসানো হবে এবং মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ নিজে তার তদারকি করবেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পুজোর আগে থেকেই পুরসভার কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে। অভিযোগ এলে দ্রুত পদক্ষেপ করবেন পুরসভার কর্মীরা।
শুধু জল জমা নয়, রাস্তাঘাট মেরামতের উপরেও জোর দিয়েছেন মেয়র। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শহরের সমস্ত রাস্তার প্যাচওয়ার্ক ও মেরামতির কাজ শেষ করতে হবে। এই নির্দেশ ইতিমধ্যেই কার্যকর করতে শুরু করেছে পুরসভার বিভিন্ন দফতর। পাশাপাশি, মেয়র এইচআরবিসি, পূর্ত দফতর এবং বন্দর কর্তৃপক্ষকে তাঁদের অধীনস্থ রাস্তাগুলির দায়িত্ব নেওয়ার আবেদন করেছেন। মেয়র বলেন, ‘‘শহরের সব রাস্তার কাজ শেষ না হলে পুজোয় ভিড় সামলানো কঠিন হবে। তাই সকলকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।’’ পুজোর দিনগুলিতে শহরের সমস্ত সুলভ শৌচালয় ২৪ ঘন্টা খোলা রাখতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । পুজোর সময় পুজো কমিটির তরফে যে অস্থায়ী শৌচালয় তৈরি করা হবে সেগুলোও ২৪ ঘন্টা খোলা থাকবে। পাশাপাশি পুজোর সময় পানীয় জল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। নজরদারি রাখতে হবে যাতে কোথাও পানীয় জলের সরবরাহে যেন বিঘ্ন না ঘটে।
বৈঠকে আরও আলোচনা হয়, বড় মণ্ডপ এবং প্রধান রাস্তার আশপাশে আলোর ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্নতা এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। পুজোর সময় যাতে কোনও দুর্ঘটনা বা অসুবিধা না হয়, সেদিকেও নজর দেওয়ার জন্য পুলিশ ও পুরসভার মধ্যে যৌথ কর্মসূচি নেওয়ার কথা হয়েছে।
সব মিলিয়ে, বর্ষার মাঝেই দুর্গোৎসব সামনে। তবে মেয়রের আশ্বাস, ‘‘পুজো বাঙালির প্রাণের উৎসব। বৃষ্টি যতই হোক, আমরা চাই উৎসবটা যেন নির্বিঘ্নে হয়। তাই আগেভাগেই সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুজোর আগে এবং পুজোর সময় শহরের প্রতিটি সমস্যায় নজরদারি থাকবে। ফলে সাধারণ মানুষ নিশ্চিন্তেই শারদীয়া উপভোগ করতে পারবেন।