• জন্মশতবর্ষে কিংবদন্তি ভূপেন হাজারিকাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য
    বর্তমান | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: জন্মসূত্রে অসমিয়া হলেও তিনি বাঙালির ঘরের ছেলে। তাঁর গলায় ‘বিস্তীর্ণ দু’পারের অসংখ্য মানুষের হাহাকার শুনে’ শুধু গঙ্গা বা গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দা নন, গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে আসমুদ্রহিমাচলের। তিনি ভূপেন হাজারিকা। আগামী সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর জন্মশতবর্ষে পা রাখছেন কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী। তার প্রাক্কালে প্রয়াত ভূমিপুত্রের স্মরণে খামতি রাখছে না অসম সরকার। ভূপেন হাজারিকার জন্মশতবার্ষিকী সাড়ম্বরে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হিমন্ত বিশ্বশর্মার মন্ত্রিসভা। তার প্রাক্কালে এক নিবন্ধে সঙ্গীতশিল্পীকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপিকা ডঃ স্মৃতিরেখা ভূঞা। তিনি লিখেছেন, ‘রূপ-রঙে বিচিত্র অসমভূমিতে গুরু শঙ্করদেব প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক ভাবনার একজন শক্তিশালী ও যোগ্য উত্তরাধিকারী ছিলেন ভূপেন হাজারিকা। শুধু তা-ই নয়, অসমিয়া লোকসাহিত্য, লোকগান সংরক্ষণেও তিনি ছিলেন পথিকৃৎ। গানের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিলেন এই কিংবদন্তি শিল্পী।

    এনআরসি, নাগরিকত্ব বিতর্কে গত কয়েক বছর ধরেই তোলপাড় চলছে অসমে। এই পরিস্থিতিতে ভূপেন হাজারিকার সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের বার্তা মনে করিয়ে দিয়েছেন স্মৃতিরেখাদেবী। আরও লিখেছেন, ‘ভূপেন হাজারিকা মানুষের গোষ্ঠীগত পরিচয় এবং গুরুত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। মনে করতেন, এসবের উপর আঘাত এলেই সাংস্কৃতিক সমন্বয় বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু তিনি এটাও বলতেন যে, কেবল দেওয়াল তুললেই সংস্কৃতি রক্ষা করা যায় না। রাজনৈতিক দেওয়াল কেবল রাজনৈতিক পরিচয় রক্ষা করতে পারে, সাংস্কৃতিক পরিচয় নয়। তাই মেঘালয়ে বাইরের রাজ্যের মানুষের প্রবেশ বা জমি কেনার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও, তারা নিজেদের মাটিতে গড়ে ওঠা খাসি ভাষার ঘুমপাড়ানি গানকে অক্ষত রাখতে পারেনি।
    সেই মাটিতে এখন বাজছে বিদেশিভাষার ঘুমপাড়ানি গান। তাই রাজনৈতিক বিবাদের ঊর্ধ্বে উঠে সংস্কৃতিকে মুক্ত রাখার পক্ষপাতী ছিলেন তিনি। অসমের জনগোষ্ঠী তো বটেই, অসম থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র রাজ্য গঠনকারী সকল জনজাতির প্রতি তাঁর ছিল গভীর শ্রদ্ধা। গোষ্ঠীগত আঞ্চলিক পরিচয়, অসমিয়ত্ব এবং ভারতীয়ত্ব—এই তিন স্তরের সাংস্কৃতিক পরিচয়ই সংঘাত ও সমস্যার অবসান ঘটাবে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন।’
  • Link to this news (বর্তমান)