• উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে সংসদে, কিন্তু ১২ জন সাংসদ বিরত থাকলেন ভোটদানে, কেন?
    আজকাল | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: মঙ্গলবার উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ চলছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোটের মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণণ এবং ইন্ডিয়া ব্লকের প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডির মধ্যে একজনকে বেছে নেবেন সাংসদরা। সকাল ১০টায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম ভোট দিয়েছেন। ভোট দিয়েছেন রাজনাথ সিং-ও। ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এবং গণনা শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টার পর। তবে তিনটি দল ঘোষণা করেছে যে তারা এই নির্বাচন বয়কট করছে।

    বিজু জনতা দল (বিজেডি)

    ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের নেতৃত্বাধীন বিজু জনতা দল (বিজেডি) ঘোষণা করেছে যে তাদের সাংসদরা উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদান থেকে বিরত থাকবেন। দলটি জানিয়েছে যে জাতীয় পর্যায়ে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ এবং কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া ব্লক উভয়ের থেকে ‘সমান দূরত্ব বজায় রাখার’ জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্যসভায় বিজেডি-এর সাত জন সাংসদ রয়েছেন, নিরঞ্জন বিশি, সুলতা দেও, মুজিবুল্লা খান, শুভাশীষ খুন্তিয়া, মানস রঞ্জন মঙ্গরাজ, সস্মিত পাত্র এবং দেবাশীষ সামন্তরায়। লোকসভায় তাদের কোনও সাংসদ নেই।

    ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস)

    তেলেঙ্গানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের নেতৃত্বাধীন ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস)-ও ইউরিয়ার ঘাটতির কারণে রাজ্যের কৃষকদের কষ্টের কথা উল্লেখ করে নির্বাচন বয়কট করার কথা জানিয়েছে। 

    দলের কার্যকরী সভাপতি কেটি রামা রাও বলেছেন, “গত ২০ দিন ধরে, বিআরএস রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় উভয় সরকারকেই ইউরিয়ার ঘাটতি সম্পর্কে সতর্ক করে আসছে। তবুও তারা কোনও সাড়া দেয়নি। প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে এবং তেলঙ্গানার ৭১ লক্ষ কৃষকের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে, বিআরএস উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদি নোটা একটি বিকল্প হত, তাহলে আমরা এটিই বেছে নিতাম।”

    রাজ্যসভায় বিআরএসের চারজন সাংসদ রয়েছেন, দামোদর রাও দিবাকোন্ডা রেড্ডি, বি পার্থসারধি রেড্ডি, কেআর সুরেশ রেড্ডি এবং রবি চন্দ্র ভাদ্দিরাজু। কিন্তু লোকসভায় তাদের কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই।

    শিরোমণি অকালি দল

    শিরোমণি আকালি দল (এসএডি)ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন থেকে বিরত রয়েছে। দল জানিয়েছে যে, তারা কেন্দ্র এবং পাঞ্জাবে ক্ষমতায় থাকা আম আদমি পার্টি (আপ) থেকে রাজ্যের বন্যা মোকাবিলায় সহায়তা পায়নি। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরসিমরত কউর বাদল হলেন একমাত্র অকালি সাংসদ।

    দলটি এক্স-এ লিখেছে, “পাঞ্জাব এবং পাঞ্জাবিরা সর্বদা দেশের পাশে দাঁড়িয়েছে যখনই এবং যেখানেই সঙ্কট এসেছে। কিন্তু আজ, অভূতপূর্ব বন্যার কারণে পাঞ্জাবিরা নিজেরাই অত্যন্ত গুরুতর সঙ্কটের মুখোমুখি। রাজ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলের তলায় ডুবে আছে, ঘরবাড়ি এবং ফসল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।” দলের তরফ থেকে আরও বলা হয়েছে, “রাজ্য সরকার বা কেন্দ্র কেউই পাঞ্জাবিদের কোনওভাবেই সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। রাজ্য বা কেন্দ্রের কোনও সাহায্য ছাড়াই সাধারণভাবে পাঞ্জাবিরা এবং বিশেষ করে শিখরা এই সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।”

    সংখ্যার দিক থেকে দেখলে, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি এগিয়ে আছে। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয় লোকসভা এবং রাজ্যসভার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি নির্বাচনী কলেজের মাধ্যমে। শূন্যপদ বাদে বর্তমান নির্বাচনী কলেজের ৭৮২ জন সদস্য রয়েছে। এর অর্থ হল বিজয়ী দলের কমপক্ষে ৩৯২ ভোট থাকা প্রয়োজন।

    লোকসভায় এনডিএ-র ২৯৩টি এবং রাজ্যসভায় ১৩৩টি আসন রয়েছে। সংখ্যার দিক থেকে দেখলে, বিজেপি স্বাচ্ছন্দ্যে সিপি রাধাকৃষ্ণণকে উপরাষ্ট্রপতির কুর্সিতে বসাতে পারবে। বিরোধী দল, অর্থাৎ কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া ব্লকের ভোট মাত্র ৩১৫, যার মধ্যে আম আদমি পার্টির ১২ জন সাংসদ রয়েছেন যারা বিচারপতি রেড্ডিকে সমর্থন করতে পারেন। তবে, সেই ১২ জনের মধ্যেও মতবিরোধ থাকতে পারে। ফলে সংখ্যার বিচারে কে কোনখানে থামবেন, তা নিয়ে এখনও দ্বিমত রয়েছে। যদিও, এই ভোটে বিজেপির লক্ষ্য কেবল জিতে যাওয়া নয়, বিজেপির লক্ষ্য অবশ্যই ব্যবধান বাড়ানো।

    ২০২২ সালে জগদীপ ধনখড় ৩৪৬ ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। ফলে বিজেপিকে নিজেদের রেকর্ড, ভাঙতে হবে নিজেদের। সূত্রের খবর, গেরুয়া শিবির এবার জোর দিচ্ছে, ‘ম্যান টু ম্যান মার্কিং’-এ। বিজেপি সাংসদদের কয়েকটি দলে ভাগ করা হয়েছে যারা সকালে জড়ো হবেন এবং দিনভর একসঙ্গেই থাকবেন, যাতে বিরোধীরা কোনও ভাবেই বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারেন কিংবা ভোট কাটতে না পারেন কোনও ভাবেই। নির্বাচনী প্রক্রিয়াটি মোটামুটি সহজ। নির্বাচিত বা মনোনীত সকল সাংসদ ভোট দিতে পারবেন। তাঁরা গোপন ব্যালটে ভোট দেন, যার অর্থ প্রত্যেকেই তাদের ইচ্ছামতো ভোট দিতে পারবেন।
  • Link to this news (আজকাল)