ভাষার ভিত্তিতে কাউকে অনুপ্রবেশকারী বলা যায়! বাংলাদেশি ফেরানোর পদ্ধতি কী, কেন্দ্রের কাছে জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট...
আজকাল | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: হঠাৎই দেশজুড়ে এক অন্য সন্ত্রাস শুরু হয়ে গিয়েছে। বাংলা ভাষা বললেই দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশি বলে। এমন ছবি দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে উঠে এসেছে বার বার। বহু পরিযায়ী শ্রমিকরা মূলত পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ যারা দেশের বাইরে কাজ করতে গিয়েছেন তাঁদেরকে বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশেও ‘পুশব্যাক’ করা হয়েছে। অপরাধ, বাংলা ভাষায় কথা বলা। এই ধরনের অভিযোগ যথেষ্টই অসন্তোষ ও উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে সারা দেশ জুড়ে।
সদ্য ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয় বীরভূমের বাসিন্দা নাম সোনালি বিবিকে। এই নিয়ে ওঠে প্রশ্ন, কোন ব্যক্তির পরিচয় সে বাংলাদেশে কি না তাঁর ভাষা দিয়ে কি সত্যিই বিচার করা সম্ভব? কারণ তার পরিচয়পত্র রয়েছে, রয়েছে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড। যা দিয়ে খুব সহজেই প্রমাণ করা বা বোঝা যেতে পারে তিনি ভারতীয় নাগরিক না বাংলাদেশের। আর সেই আইন অনুযায়ী কোন পরিচয়পত্র যাচাই না করেই একটি মানুষকে বাংলাদেশী বলে দাগিয়ে দেওয়া যিনি প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় বাসিন্দা বাঙালি ও বাংলার নাগরিক। তাঁকে এভাবে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া বা বাংলাদেশি তকমা দিয়ে অসম্মান করাটা একজন ভারতীয় নাগরিকের কাছে কতটা সম্মানজনক!
বাংলার শাসকদলের সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এই নিয়ে ভাষা আন্দোলনেরও ডাক দেন একুশে জুলাই মঞ্চ থেকে। এরপর ২৮ আগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনও বাংলা ভাষা নিয়েই সরব হতে দেখা যায় মমতা এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ যুব সমাজকে। বাংলা ভাষা নিয়ে এই ধরনের কুরুচিকর মন্তব্য এবং পদক্ষেপ যা অতি অসম্মানজনক বাংলা ও বাঙালির পক্ষে, তার বিরুদ্ধে তৃণমূলের পাশাপাশি কংগ্রেস, সিপিএম উভয়ই আন্দোলনে মাঠে নেমে পড়ে। আর এই প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, যার কারণে যথেষ্ট চাপে পড়ে কেন্দ্র তথা বিজেপি সরকার। মূলত বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতেই বাংলা ও বাঙালিকে অসম্মান করার চিত্র প্রবল ভাবে প্রকাশ্যে এসেছে।
সেই প্রতিবাদের ঝড় ও আঁচ গিয়ে পড়েছে সুপ্রিম কোর্টেও। বাংলাদেশে পুশব্যাক করা নিয়ে মামলা হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। আর সেই মামলার অবিলম্বে শুনানি ও ফয়সালা যাতে শীঘ্র হয় সেই জন্য সুপ্রিম কোর্ট বার্তা দিয়েছে। দেশের শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোনও ব্যক্তির ভাষা নিয়ে সে দেশি না বিদেশি তার সিদ্ধান্ত করা যায় না। তাঁর প্রকৃত পরিচয়পত্র রয়েছে, তা দিয়েই নাগরিকত্ব বিচার করা উচিত।
গত ২৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত, বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি বিপুল পাঞ্চোলির ডিভিশন বেঞ্চ কেন্দ্রের কাছে জানতে চায়, রাজ্যে রাজ্যে যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে দেশে ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে তার পদ্ধতি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) কি? একই সঙ্গে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী প্রশ্ন তুলেছেন, কোন ব্যক্তির ভাষার ভিত্তিতে তাকে কি অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করা যায়? ভাষার ভিত্তিতে কি তাঁর নাগরিকত্ব নির্ধারণ করা যায়?
দিল্লি পুলিশ সম্প্রতি বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি ভাষা হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। যা খুবই নিন্দনীয় এবং দুর্ভাগ্যজনক। আর সেই নিয়েই বিচারপতি বাগচী জেনারেল সলিসিটর তুষার মেহতার কাছে প্রশ্ন তোলেন, “যেখানে কোনও ব্যক্তিকে ভাষার ভিত্তিতে বিদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে আমরা এই পক্ষপাতদুষ্ট প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাখ্যা চাই।”